Tuesday, December 29, 2015

আসুন ডাক্তারগণ! এবার জাগি!

আমরা যারা ৫০ শয্যা নয় এমন সব হেলথ কমপ্লেক্স-এ ইমার্জেন্সি ডিউটি করে আসছি; তারা কেন করছি; অর্গানোগ্রামে এসব জায়গায় ই.এম.ও পোষ্ট নাই!

প্রথম সেই কবে শুরু হয়েছিল "অণুরোধে" আর ডাক্তারদের "মানবতা"য়; সেই থেকে চলছে...

তো সরকারী যেসব সেবাপ্রতিষ্ঠানে আপনি বহু কাঠখড় পুড়িয়ে; ধর্ণা দিয়ে; "স্পীড মানি" দিয়েও কাংখিত সেবাটি পান না সেখানে একেবারে উপরি হিসেবে; মেঘ না চাইতে বৃষ্টি হিসেবে এই ডাক্তাররাই "সেবা" দেয়া শুরু করল; আর হ্যা এই সেবাটি কিন্তু আপনার জমি'র সেবা না; আপনার যানবাহনের সেবা না; আপনার অর্থকড়ির নিরাপত্তার সেবা না; আপনার পড়াশোনার সেবাও না; আপনার "নিজের" সেবা। যে স্বাস্থ্য সম্বল করে আপনি ও আপনার চারপাশের মানুষ টিকে আছেন সেইটেই টিকিয়ে রাখার জন্য; জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন নিয়ে সেবা! তাও "বিনামূল্যে"ই না বরং আপনি উপরুন্তু কিছু পাবেন!!!

আর এতসবের পুরষ্কার হচ্ছে "এলাকাবাসীর হুমকি-ধামকি" থেকে শুরু করে "সরাসরি শারীরিক লাঞ্চণা"!

বেশ পাচ্ছি বটে আমরা!

আজ মন্ত্রী বললেন আমাদের ২৪ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে! আমরা হাসব না কাঁদব!?

আমাদের ভাষা হারিয়ে যায়।

এখন সময় এসেছে আমাদের নিজেদের "আবদান"টুকু চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার; আর বিনয়ী থাকা চলবে না; আমরা কি করছি তা একেবারে উপর পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে আর এ ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে আমাদের নেতাদের; যাদের আমরা বছরের পর বছর নির্বাচিত করে আসছি; যাদের জন্য স্লোগানে স্লোগানে আকাশ ভারী করছি আর প্রতিদানে তারা আমাদের দীর্ঘশ্বাসই বাড়িয়েছেন।

নেতারা কি ভাবেন যে আমাদের "সত্য"টা জেনে গেলে "সমস্যা" হবে!? কেন আসল "অবদান"এর কথাগুলো এমনভাবে যায় যেন এটি ঐ নেতার অবদান বা হবারই ছিল!

এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার; তাই নতুন দিনের নতুন ডাক্তারেরা সবাই সোচ্চার হোন!

নিজের জন্য; ডাক্তার সমাজের জন্য; যেন আগামীকালের ছেলেটি বা মেয়েটি ডাক্তার হতে চাওয়াটাকে "অপাংক্তেয়" না ভাবে!

Thursday, October 22, 2015

শিক্ষাসচিব বড় "বড়" আসন

আগেও আমাদের জ্ঞানী শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান'এর কথা ও কাজে তাকে যথেষ্ঠ উচ্চাভিলাষী মনে হয়েছে; এবং বাস্তবতাও তাই বলে! দেশের কয়েক লাখ টাকার এক একটি ডিজিটাল ক্লাসরুম ইউনিট এখন কি অবস্থা কেউ কি জানেন? দেশের প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ক্লাসরুমের জন্য যে প্রজেক্টর আর শিক্ষকদের জন্য ল্যাপটপের শতকরা ১০ ভাগ সচল আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়! অথচ আমাদের (সরকারের বলছি না কারণ "আমরাই সরকার"; টাকাটা "আমাদের") কোটি কোটি টাকা এর পেছনে গেছে!

এর চাইতে এই অর্থ স্কুলগুলোর শিক্ষকদের পকেটে দিতে পারলে তারা শিক্ষাদানে আগ্রহী হতেন বলে আমি বিশ্বাস করি!

যাই হোক এটি একটি দীর্ঘ আলোচনার বিষয়; কিন্তু এইমাত্র ৭১ টিভি'র আলোচনায় শুনলাম ক্লাস ওয়ানে ভর্তির ক্ষেত্রে নাকি "অভিভাবকের ঠিকানা"র সার্ভে করা হবে; যে যেই স্থানের মোটামুটি স্থায়ী তারা সেই স্থানের স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে; বাকিরা না!

তারমানে সোজা কথায়; "সার্ভে" ব্যাপারটা যদি করাই যায় (এহেন সার্ভে "ফলপ্রসুভাবে" করা যায় বলে আমি আস্বস্ত নই; অন্তত বর্তমান অবস্থায়!) তাতে বেইলি রোড আর মতিঝিল; উত্তরা; বারিধারার জন্য বাইরের শিশুদের পথ মোটামুটিরকম বন্ধ!
নে ভাই একটা আলাদা "জোন" তৌরি করা গেল! ঐগুলোই "আশ্রাফ" থাক; বাকিরা "আতরাফ"!

তার প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ ও বন্টনের আধুনিক নিয়ম যে মাঠা মারা গেছে তা আর বলতে! তিনি বলেন "একটা সিস্টেম দাড় করতে সময় লাগে"। সময় দিতে দিতে যে আরেকটা ভূল সিস্টেম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!?

যাইহোক! তিনি বিশ্বের ৮০ টি দেশ ঘুরে; বিভিন্ন সভ্যতা দেখে-শুনে অনেক ভূয়ো-দর্শন হয়ত পেয়েছেন; কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় সেগুলো "বাস্তবাতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; আমাদের সামাজিক ব্যাবস্থা উপযোগি নয়; অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী"!

একমাত্র সময়ই বলে দিতে পারে তিনি "দূরদর্শী" নাকি "অন্ধ"! তবে এখন তিনি "চোখে ভালো দেখেন না" বলেই মনে করছি!

Monday, October 19, 2015

লাল সালাম

আজ এক অভূতপূর্ব সমাবেশ হল; অভূতপূর্ব বলছি এই কারণে যে কোন নেতার তুষ্টি অর্জনে নয়; কোন পোষ্ট প্রোমোশন নয়; দলীয় রুটি হালুয়ার লোভে নয়; সম্পূর্ণ নিজ মর্যাদার জন্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করে দেশের পুরো একটা অংশের দূর-দূরান্তের যেসকল মানুষ একসাথে হয়েছিলেন তা সত্যিই আমাদের আশার আলো দেখায়!

এমন একটি সুশৃংখল ও আহিংশ সমাবেশের পেছনের ও সামনের সারির সকলকে আজস্র ধন্যবাদ। বিশেষকরে বাহার স্যারকে "স্যালুট"; ডাক্তাররাও তাদের মেরুদন্ড সসোজা করে দাড়াতে পারে শুধুমাত্র এটি বোঝানোর জন্যই তাকে আযুত "লাল সালাম"!

তবে কোন হার্ডলাইন নির্দেশনা আসেনি এ সমাবেশ থেকে; যেগুলো সফটলাইন নির্দেশনা এসেছে সেগুলো হল:
-আমরা আমাদের আগের নিয়মেই আমরাই বেতন বিল সাইন করব;
-আগামী ২১ তারিখ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সন্মেলন করা হবে এবং
-আগামী ২৪ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ থেকে চুড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা

কিন্তু.....

এই অল্প অল্প; একটু আধটু করে এগোতে থাকলে আন্দোলন ঝিমিয়ে না যায়! আমরা পেশাজীবিরা ছাত্রদের মত পুরোটা সময় যেমন আন্দোলনে দিতে পারবনা তেমনি গণ-মানুষের সমস্যা যেহেতু নয়; সেহেতু এতে গণ-জাগরণও সম্ভব নয়!
সেহেতু আমাদের এগুতে হবে আরো উদ্যমে; আরো "প্রণব-নাদ-প্রচন্ড" হয়ে; দেখাতে হবে আমরাও "আকাশ হতে বজ্র হয়ে ঝরতে জানি"!

বাসের শ্রমিক যারা মোটামুটি দিন আনে দিন খায় টাইপ; তারা "অন্যায়ভাবে" ৭ ঘন্টা বাস বন্ধ রেখে দাবী আদায়ের (অন্যায় দাবী) অংগীকার নিতে পারে আর আমরা এত্ত এত্ত ডাক্তার একদিন কি "স্ট্যাচু" হয়ে থাকতে পারিনা!

মাত্র "এক" দিন!

স্ট্যাচু মানে স্ট্যাচু! কিচ্ছু করা যাবেনা; কোন ইমার্জেন্সি না; কোন প্রাইভেট প্রাক্টিস না!

এতে করে কোন ডাক্তার না খেয়ে মারা যাবেনা এইটা নিশ্চিত; কোন কোন দুর্ভাগা রোগীকে হয়ত মূল্য দিতে হতে পারে! কিন্তু কিছু করার নাই; রাজনীতির বলি-গুলিতে এত মানুষ মারা যায় তার বদলে এইটুকু ত্যাগস্বীকার করতেই হবে!

এই "একদিন"এর ত্যাগস্বীকার সারাজীবনের জন্য আজ ও আগামীর সকল ডাক্তারদের নটকর্ড থেকে মেরুদন্ড সোজা করে দেবে! কোন সন্দেহ নাই!

হবে সেই একদিন!!?
কবে?

Saturday, October 10, 2015

তুমি যে কি জানো না; তা কি তুমি জানো!?

আমাকে ছোটবেলায় এক স্যার বলেছিলেন : "আচ্ছা তুমি যে 'কি' জানো না; তা কি তুমি জানো?"

কোন কিছু জানতে হলে; আরো-দূর এগোতে হলে এই "কি" জানা খুবঈ গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার!

তেমনি...

কোন "সমস্যা"র সমাধান করার একটা অলিখিত শর্ত হচ্ছে সেইটা যে একটা "সমস্যা" এই ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়া। আমরা এই ধাপ নিয়ে কখনো ভাবিই না কারণ ভাবতেই হয়না; আমাদের সহজাত যুক্তিবুদ্ধি আমাদের বলে দেয় "সমস্যা"টা একটা সত্যিকারের "সমস্যা"!

কিন্তু বর্তমানে দেশের এত এত সমস্যা এগুলোর কোন সমাধান হচ্ছেনা এই গোড়ার ধাপটাই নাই বলে! এই সমস্যাগুলোকে আগে স্বীকার করতে হবে সরকারকে যে আসলেই এগুলোই আমাদের "সমস্যা"; তারপরই কেবল সেগুলোর সমাধান সম্ভব!

শুধু ও কেবলমাত্র শুধু তবেই....
মেডিকেল ভর্তি ও পরীক্ষা নিয়ে জট কাটবে
শিক্ষকদের চাওয়া পাওয়া মিলবে
সরকারী বেতন স্কেল নিয়ে সমস্যাও মিটবে
দেশে জংগীবাদের সুরাহাও হবে
বিদেশীরাও এ দেশকে "অনিরাপদ" ভাববে না
ছোট্ট শিশুটির "লাইসেন্সড" পিস্তলের গুলি লাগবেনা

তাই আসুন "সমস্যা" চিনতে শিখি; স্বীকার করতে শিখি ; হ্যা এইটাই "সমস্যা"!

Friday, October 2, 2015

হিন্দি গান ও আল্লা-খুদা

হিন্দী গানে যে পরিমাণ আল্লাহ; খুদা; রাব এইসব শব্দ ব্যাবহার করা হয় সেই তুলনায় ওদের গনশা-দেবা খুবই নগন্য!
ব্যাপারটা এমন কি করে হল!?
কিছু কিছু গানে আবার "খুদা জানে.. তু বান গায়ে হু মেরে খুদা!" বলে সরাসরি শিরক করা হয়েছে! গানটা যতই ভালো লাগুক (ভালো লাগবেই; আমারো লাগে কারণ শয়তান এইটাই চায়; এইটাই "নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার"!) সাবধান থাকতে হবে ; খুব খিয়াল কইরা!

আবার ওরাই কয়েকবছর আগে দেবদাসে বাড়ির বউ আর নটী (চরিত্রায়ণে ঐশ্বরিয়া আর মাধুরী দীক্ষিত)
একসাথে নাচার দৃশ্যে হলভর্তি লোকে নাকি ছি: ছি: করে উঠেছিল! এখন আবার সেই আধুনিক নটীদের অন্যতম সানি'কে যেভাবে "লালন-পালন" করছে তা বিশ্বয়কর!

Thursday, September 24, 2015

অনি:শেষ হাহাকার

প্রশ্নপত্র ফাঁস চলছেই!
এমন কি পরীক্ষা নাই যে প্রশ্ন ফাঁস হয়নাই! জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি থেকে মেডিকেল ভর্তি পর্যন্ত!  মোটামুটিভাবে হাক-ডাক করেই প্রশ্ন ফাঁস করা হয়েছে আর সরকার সেই ব্যর্থতা অস্বীকার করে সমস্যা জিইয়ে রেখে বিদ্যুত গতিতে ফলপ্রকাশ করে দিয়ছে। দেশের স্বাস্থ্য-শিক্ষাব্যবস্থার এঈ অবনমনে কে কতটুকু পেল আর কোথায় কতখানি ক্ষতি হল?

কিছু অর্থলোভী কুলাংগার হয়ত টাকার জন্য প্রশ্নগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছেন; কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগান কি এই এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা দিয়েছে?

না! মোটেই না! প্রতিটি অর্থ এসেছে অভিভাবকের পকেট থেকে! তারা "এককালীন বিনিয়োগ" হিসেবে পাওয়া প্রশ্নটি তুলে দিয়েছেন তাদের সন্তানদের হাতে!

তাহলে ঘটনা কি দাড়ালো!? সরকারি যে সুবিধাটুকু মেধাবী কিন্তু বিত্তহীনদের জন্য ছিল সেটুকু দখল করে নিল বিত্তশালী কিন্তু "পতিত চরিত্রের" কিছু মানুষ! আর বেসরকারিভাবে চিকিৎসা শিক্ষার অংশটুকু তো আগে থেকেই বিত্তশালীদের হাতে (বরং এইবার হয়ত এটা বলা হবে; এই অংশটুকু সত্যিকারের মেধাবী!)

আর যে ছেলেটা, যে মেয়েটা দিন-রাত পড়েছে; প্রশ্ন পাওয়ার চেষ্টা করেনি; যার অভিভাবকেরা এখনো সন্তানের মনুষত্বকে কলুষিত করেনি তাদের জন্য কি উপহার থাকল? রাষ্ট্র তো তাদের কিছুই দিতে পারল না! বরং এটা বুঝিয়ে দিয়েছে- দেশটা; দেশের মানুষেরা সব ভেতরে ভেতরে পচে গেছে!

কদিন পর যদি আমাকে আমার ছোট্ট শিশুটা প্রশ্ন করে "আমার দেশটা এমন কেন? মানুষগুলো এমন কেন?"
তখন আমি কি উত্তর দেব? ওকে কোন পথ দেখাবো? কোনো আশার কথা; সম্ভবনার কথা কি আমি শোনাতে পারব?

Wednesday, July 1, 2015

আমি ডাক্তার: আমাকে ব্যবহার করুণ

আমি প্রথম আমার জানামতে “ব্যবহৃত” হয়ে গেলাম আমার ইন্টার্নশিপ সময়।  সার্জারী ওয়ার্ড চলাকালীন সময়। আগের রাতে ইমার্জেন্সি ওটি করার পর শুক্রবার সকালেও আছি ওয়ার্ডে। এক রোগীর লোকজন আসলো একটা বড় জারে করে ভিসেরা নিয়ে (সম্ভবত রিসেকটেড পার্ট অফ ইনটেস্টাইন ছিল), এইটা সে কোথায় পরীক্ষা করাবে। সাথে আমাদের ওয়ার্ডের এক ওয়ার্ডবয়। কথায় বুঝলাম আগের রাতে যে কাগজ লিখে দেয়া ছিল তা তারা হারিয়ে ফেলেছে (এইটাই স্বাভাবিক তারা সামান্য সাপোজিটরি কেনার “টাকার রসিদ” যত্নে রেখে দেয় আর সব গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হারিয়ে ফেলে)। তো আবার লিখে দিলাম এরেকটা কাগজে সর্ট হিস্ট্রি আর ইন্ডিকেশন, অপারেশনসহ ডিটেইল, বললাম “মির্জা প্যাথলজিতে” যান ঐখানে এই পরীক্ষা সবচে ভালো হবে; সরকারীভাবে আমাদের হাসপাতালে হিস্টপ্যাথলজী পরীক্ষা করার সুযোগ ছিলনা।
কিছুক্ষন পর আবার তাদের আগমন, এইবার সাথে আমাদের ওয়ার্ডের ওয়ার্ডবয়;
-স্যার গরীব মানুষ, একটু কম লিখে দেন।
আমরা সাধারণত সবাইকেই বাইরে “ডিসকাউন্ট অ্যাস পসিবল” লিখে দিতাম কিন্তু প্রবাদপ্রতিম মির্জা স্যারের একটা ব্যাপার ছিল তিনি সাধারণত কোন "কম রাখা" বা “ডিসকাউন্ট”কে উৎসাহিত করতেন না, তার উপর আবার হিস্টোপ্যাথলজিতে! এতকিছু রোগীর লোকজনকে বোঝানো চেষ্টা করাই বৃথা তাই আমি লিখে দিলাম। কিছুক্ষন পর আমি নামাযের জন্য বের হতে ওয়ার্ডের মুখেই দেখলাম ওয়ার্ডবয় রোগীর এক লোককে বলছে- “এই পরীক্ষার দাম এক হাজার টাকা, দেখছেন আমি ফিফটি পারসেন্ট কমাইয়া দিলাম! দেন আমারে ৪০০ টাকা দেন!” ওই ব্যাটার ঝাড়িতেই হোক আর দাপটেই হোক রোগীর লোক সেটা বের করে দিল। এরই মাঝে আমাকে দেখে ফেলায় ওয়ার্ডবয় রোগীর লোকদের ‘যান যান তাড়াতাড়ি যান’ বলে দূরে সরিয়ে নিল। ঘটনাটা আমার কাছে এতই আকস্মিক আর অপ্রত্যাশিত ছিল যে আমি মুক’এর মত দাঁড়িয়ে রইলাম!
তো এইভাবেই আমি আমার “গোচরে” প্রথম বিক্রি হয়ে গেলাম! অগোচরে আরো কতবার হয়েছি তার ইয়ত্তা নাই!

আমরা ভর্তি রোগীর ‘ক্যাথেটার’ না করলে ওয়ার্ডবয়রা করে টাকা নিত আর ওরাই আরো ইনফেকশন’এর রাস্তা তৈরী করে দিত তাই অ্যাাডমিশনের দিন দম ফেলবার সময় না থাকার পরেও সবার ক্যাথেটার নিজেরাই করে দিতাম। পরে শুনতাম আমরা রোগীকে ক্যাথেটার করার জন্য নাকি চার্জ নিই (আমাদের হয়ে ওয়ার্ডবয় সেই টাকা তোলে!)। দু একজন সচেতন রোগীর জন্য হয়ত এগুলো কদাচিৎ জানা যেত আর বাকিসব এভাবেই চলত। আমরা সার্ভিস দেই নিজেদের সবটা দিয়ে “বিনামূল্যে” আর ওদিকে “নিজেরাই বিক্রি হয়ে যাই” ঠিক এই ব্যপারটাই হচ্ছে এখন আমার উপজেলায়! এখানে ইমার্জন্সি কাটা ছেড়া থেকে মুসলমানীর মত মাইনর সার্জারীও করে ফেলে ওয়ার্ডবয়! আমরা এসে সব নিজেরা ফ্রি’তে করা শুরু করলাম। পরে দেখি আমাদের অগোচরে পেশেন্টের কাছ থেকে ওরা!
আউটডোরে আমরা সব রোগী দেখি এক্কেবারেই বিনামূল্যে কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে আগেই হয়ত আমার ভিজিট নেয়া হয়ে গেছে! আমি আমার আজন্তেই বিক্রি হয়ে গেছি ১০, ২০, ৫০ বা ২০০ টাকায়!!!

এভাবেই আমরা ডাক্তারেরা ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন আমাদের আজন্তেই!

উপজেলায় এখন যথেষ্ট পরিমান “গ্যাসের ওষুধ” (ইসওমেপ্রাজল) সরবরাহ আছে। লোকে যখন সরাসরি “গ্যাসের ওষুধ” চায় তখন দিই না বলে তারা এখন বানিয়ে বলে “স্যার শুধু গ্যাসের সমস্যা, আর কোন সমস্যা নাই”! আমদের আর কি করার থাকে, ওরাও আমাদের ব্যবহার করে!

হয়ত মধ্যারাতে আপনার দরজায় কড়া নাড়া বা দজরা’র নাগাল না পেয়ে জানালায় টোকা! “স্যার! ওঠেন আমার বাচ্চা অসুস্থ!” আপনি আর সইতে না পেরে মহানুভব হয়ে যদি উঠেই পড়েন তবে যেহেতু “আপনারও বাবা-মা-সন্তান আছে” তাই আপনিও “মনবতা” দেখাতে বাধ্য হবেন! এবং অবশ্যই আপনার এই “মানবাতা”র মূল্য দেবার মত দুঃসাহস তারা করবেনা!
আপনি ডাক্তার! দোকানে গেলে, বাজারে গেলে, রেস্টুরেন্টে গেলে ভুলেও পরিচয় দেবেন না! তবে আপনার ট্যাক থেকে বেশী খসবেই, “আপনি ডাক্তার আপনার কি টাকার অভাব আছে”! কিন্তু আপনার কাছেই যখন ঐ ব্যক্তি রোগী হয়ে আসবে তখন সে যে আপনার পরম আত্মিয়, খুব কাছের লোক তা আপনি ভুলে যেতে পারবেন না, তারা প্রমাণ করে দেবে আপনি তাদের কত আপনজন! আরে, আপনজনের কাছ থেকে ভিজিট নিবেন আপনি তো আর অত “খারাপ” না!

এইভাবেই চলে যায় “ডাক্তারের দিনরাত্রি”!

01.07.2015
ডা. আহমেদুর রহমান সবুজ


Thursday, May 21, 2015

লাল-বাগ, লাল কেল্লা

সেই কবে যেন একবার লালবাগ কেল্লা গিয়েছিলাম শেষবার, তাও ঠিকঠাক হিসেবে ৯ বছর আগে হবে। সেবার গিয়ে প্রায় পুরোটা আস্তে আস্তে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম আর শুধু মনে হয়েছিলঃ “আহা! কী ঐশর্যই না ছিল আমাদের আর কী তীব্র আবহেলাই না করছি আমরা!”

আমার কেন যেন মনে হয় উপার্জনের চিন্তা না থাকলে আমি সত্যি যদি কিছু হতে চাইতাম সেটা হচ্ছে ‘আর্কিওলজিস্ট’! সেই একই জনপদ, একই আকাশ, একই চাঁদ-তারা-সূর্য, একটু অন্যভাবে বলতে গেলে জিপিএস হিসেব করলেও সেই একই জায়গা পাওয়া যাবে কিন্তু শুধু বদলে যাওয়া সময়ের সাথে বদলে যায় ‘নশ্বর’ মানুষগুলো আর চারপাশ। রেখে যায় কত আনন্দ-বেদনাকাব্য; যা কিছু বর্ত্মান একসময় সব ইতিহাস হয়ে যায়। নতুন সময় আসে, সভ্যতা আবার নতুন করে চলে, আবারো তৈরী হয় নতুন ইতিহাস!
সেই কবিতার মত “তারপর ইতিহাস হব” , আসলেই তারপর সব ইতিহাস হবার গল্পগুলো কী চমৎকার মোহময়ই না হয়! যাকগে সে কথা! আমি আসি এখনকার কথায়!

তো গতবারেই দেখেছিলাম কিছু সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল, হাতুড়ির ঠুকঠুক চলছিল আর একদিকের দেয়ালে তীব্র লাল রঙ দেয়া হচ্ছিল (যেটা তখন জেলখানার গায়ে দেখেছিলাম)। আমার ব্যাপারটা ভালো লাগেনাই তখনই, আমার মনে হত ‘এই তো সেই ইট যা সেই কবেকার কোন সময়ে গাঁথা, তখনকার ধূলোবালি-ঝড়-ঝঞ্ঝা বুকে নিয়েই সময়ের সাক্ষী হয়ে এতদিন টিকে আছে, বয়সের হিসেবে তো ওকে আমার দাদাও “আপনি” বলে ডাকবে! সেই ইটগুলো তো আর সামান্য ইট না, তার চাইতে বেশী কিছু! সেগুলোকে যখন সংস্কারের নামে কিছু রাজমিস্ত্রি ভেঙ্গে ফেলে, আমি মেনে নিতে পারিনা! আমার মনে হয় ওগুলোকে কেবল নরম ব্রাশ দিয়েই ছোঁয়া সম্ভব!

এবার গিয়ে দেখলাম বেশ পরিবর্তন বোঝা যায়, সেইসব বাতিল ইট ফেলে দিয়ে ওসব যায়গায় নতুন ইট বসেছে আর অনেক গাছপালা দিয়ে এর একটা নতুন আকর্ষণ নিয়ে আসা হয়েছে। “সাধারণ” দর্শকেরা এতে আকৃষ্ট হয়, ব্যাপারটা ভালো একটা চোখ “জুড়ানো ব্যপার” আছে। “সাধারণ দর্শক” বলছি এ কারণে যে আমি দেখেছি ঐসব জায়গাই বেশীরভাগ লোকেই যায় হাটার জন্য আর “দাঁতের কাজ” করার জন্য! (“মুখের কাজ” বললেও খারাপ বলা হয়না, তবে “হাতের কাজ” বললে লোকে ভুলে বুঝবে!) তারা চারপাশ দেখে আর বলেঃ “ধ্যূত! কই আসলাম দেখার কিছু নাই! খালি কয়টা হাড়ি-বাটি আর একটা কব্বর!” যেমনটা লোকে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বলেঃ “ধুর কি দেখব! দেখার আছেটা কি! শুধু বালি আর পানি এইতো!?”

আগেরবারের হাম্মামখানা দেখে তো আমি থ! এত্তবড় জায়গায় নাকি একজন গোসল করতে আসত আর তার জন্য আবার গরম পানি আনা হত কি আয়োজন করেই! শুধু গরম পানিই না, এক চুল্লীর উপর দিয়ে বাতাস দিয়ে গরম বাতাসেরও ব্যাবস্থা ছিল। পোষাক পরিবর্তন কক্ষ আর চারপাশ তাকিয়ে স্নানপ্রক্রিয়ার প্রাইভেসি নিয়ে দোটানায় পড়ে গেছিলাম, পরেই মনে পড়ল এই চারপাশের বড় বড় দালানগুলো তো মরা হাতির পাশে চামচিকা’ই। তখন তো এর কোন অস্তিত্ব ছিলনা...

তখন ১৬৭৮ সাল। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ শাহ আজম ঢাকার সুবেদার হিসেবে এই দূর্গের নির্মানকাজ শুরু করেন। তখনকার দিনে এজকের এই নতুন ঢাকা ছিল শুধুমাত্র শ্বাপদের আস্তানা মাত্র, ঘন জঙ্গল আর বড় গভীর ডোবাপুর্ন, এদিকটায় বসতিও তেমনকিছু ছিলনা। সেদিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা ছিল স্রোতস্বিনী, উদ্ভিন্নযৌবনা এক নদী যার প্রশ্রয়ে এর তীর ঘেষে ঢাকার পত্তন হয়। কেল্লার পায়ে তখন বুড়িগঙ্গার ঢেউ নূপুর হয়ে বাজে। মুঘল স্থাপত্যরীতির আদলেই গড়ে উঠতে থাকে “কেল্লা আওরঙ্গবাদ”; তখনকার সময়ে এই জায়গাটার নাম “আওরঙ্গবাদ” ছিল পরে ইসলাম খা’র শাসনামলে জায়গার নাম বলদে “ইসলামবাগ” হয়ে যায় (যা আজো “ইসলামবাগ” হয়েই আছে) আর কেল্লার নাম হয়...। ।  
দূর্গের কাজ শুরু হয়ে কেবল মসজিদ ও দরবার হল নির্মান শেষ হয়, (যে মসজিদে আজো মুসল্লিরা নিয়ম করে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন) আর এরই মধ্য মারাঠাদের যন্ত্রণায় আতিষ্ট মুঘল সম্রাট পুত্র শাহ আজমকে বিদ্রোহ দমনে দিল্লি ডেকে পাঠান। ঢাকার ঐশ্বর্যের মোহে পড়া শাহ আজম বুড়িগঙ্গায় জাহাজে ওঠেন আর পেছনে পড়ে থাকে আসমাপ্ত “কেল্লা আওরঙ্গবাদ”!

এরপর বাংলা শাসনে আসেন বিখ্যাত শায়েস্তা খাঁ, তার আমলে “টাকায় আট মন” চাল পাওয়া যেত। সেটা ১৬৮০ সালের কথা। তিনি নাকি কেল্লা’র কোন এক দরজায় এই বলে তালা মেরে যান যেঃ “কেউ যদি আমার পরে এর চেয়ে কম দামে বাঙ্গালিকে খাওয়াতে পারে সে যেন দরজাটি খোলে”। বলা বাহুল্য তেমন কেউ আর ইতিহাসে আসেনি আর আসবেওনা আর সেই না-জানা কক্ষের দরজাটিও চিরিদিনের জন্য বন্ধ থেকে হারিয়ে গেছে! শায়েস্তা খাঁ এরপর আবার দূর্গের নির্মাণকাজে হাত দিলেন। শায়েস্তা খা’এর প্রতি শাহজাদা আযমের আনুরোধও ছিল দূর্গের কাজ সমাপ্ত করার।

কিন্তু মানুষ চায় এক আর হয় আরেক! এ দূর্গের ভাগ্যে যেন শেষ লেখা নেই, প্রিয় কণ্যা “ইরান দুখত” বা “রহমত বানু”, পরিবিবি নামেই যিনি ইতিহাসে পরিচিত এবং যার বিবাহের কথা ছিল এই দূর্গের গোড়াপত্তনকারী শাহজাদা মুহম্মদ আযম শাহ’এর সাথে; সেই পরীর মত কন্যার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পিতা দরবার হল বরাবর নির্মাণ করলেন কন্যার সমাধিক্ষেত্র। যেন দরবার হলের দরবারে বসে রাজকাজ পরিচালনার সবটুকু সময়ে কন্যাকে চোখের সামনে পাওয়া যায় আর মসজিদে যাবার পথেই পড়ত সমাধিটি। পরিবিবির সমাধিক্ষেত্রের জন্য দূর দুরান্ত থেকে মহামূল্যবান পাথর আনা হয়, সুদূর রাজমহল থেকে এনেছিলেন কালো ব্যাসল্ট পাথর। সাদা মার্বেল পাথরের বড় বড় ফলক এনেছিলেন জয়পুর থেকে। শ্বেত চন্দন কাঠ এনেছিলেন দরজা ও খিলান নির্মাণের জন্য। সমাধির ফলকগুলো রাখা হয় আস্ত। তার ওপর কাটা হয় নকশা। সমাধি সৌধের বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করা হয় ফুলেল নকশাখচিত জালি ও ফলক দিয়ে। এটিই বাংলাদেশের মুঘল স্থাপত্যের একমাত্র নিদর্শন যেখানে পুরো সমাধিতেই মার্বেল পাথর ও ছাদে কষ্টি পাথর ব্যাবহার করা হয়েছে। আর এর ভেতরের নয়টি কক্ষ সাজানো চাকচিক্যময় বিভিন্ন রঙয়ের ফুল পাতার টালি দিয়ে যা দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য স্থাপতে বিরল। বলা হয়ে থাকে এর পুরো গম্বুজ এমনভাবেই সোনা দিয়ে ছাওয়া হয় যা রৌদ্রকরোজ্জল দিনে চারপাশে এক আশর্য দ্যুতি ছড়াত। তবে কালের যাত্রায় সেই সোনার পাতের বদলে যায় তামার পাতের আস্তরণে এখনও হয়ত তার কিছু অবশিষ্ট আছে তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে পরিবিবির মরদেহ আর এখন সমাধিক্ষেত্রে নেই বলেই ঐতিহাসিকদের ধারণা!

কন্যার মৃত্যুশোক আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি শায়েস্তা খাঁ, কথিত আছে তিনি দূর্গকে ‘অপয়া’ ভাবতেন তবে এরপর তিনি আর দূর্গের কোন কাজে হাত দেননি। ১৬৮৮ সালে আগ্রা চলে যাবার পর নির্মাণকাজ শেষ হওয়া আবারও আনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

১৭০৪ সালে বাংলার শাসনকেন্দ্র মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে দুর্গ হিসেবে লালবাগের রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যায়। এটি ব্যাবহৃত হতে থাকে সৈনিকদের ব্যারাক হিসেবে। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ও এখানকার সব বাঙ্গালী সৈনিকেরা গর্জে ওঠে কিন্তু সেনাপতি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর “(নামটি মনে করতে পারছি না)” ও বৃটিষ বেনিয়ার সাথে সেদিন পেরে ওঠেনি বাংলার বিদ্রোহ। সৈনিকে রক্তে লাল হয় লালবাগ, লাল হয় বুড়িগঙ্গার পানি। এ যেন দূর্গের লালবাগ দূর্গের লাল’এর এর অনন্য মহিমা এনে দেয়।
এরপর বিভিন্ন সময়ে লালবাগ কেল্লা ব্যাবহৃত হয়েছে সেনানিবাস হিসেবে। ব্রিটিশরা একে প্রায় ১০০ বছর ব্যাবহার করেছে আর দিন দিন এর অবস্থা আরো করুণ থেকে করুণতর হয়েছে। আশেপাশে গড়ে উঠেছে সুউচ্চ অট্টালিকা যা কেল্লার সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করে।
১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে পত্নতত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়।

অবশেষে নির্মাণের প্রায় ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংষ্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়।
কালের বিবর্তনে সেই নূপুর হয়ে থাকা নদীপাড় দখল হয়ে চলে গেছে বহুদুর, কথিত যমুনাপাড়ে যাবার সুড়ংপথ বন্ধ হয়েছে চিরদিনের জন্য, কত না ঐতিহাসিক নিদর্শন “সামান্য ধূলোমাটি” হয়েছে অবহেলায়, কত আসল নিদর্শন ‘আনডিটেক্টেবল রেপ্লিকা’য় বদলে গেছে তার খবর রাখার মত বাঙ্গাল কই! সংস্কার করতে গিয়ে, দর্শনার্থী-বান্ধব করতে গিয়ে প্রধান মুঘলী ফটকের উচ্চতা কমে গেছে অনেকটা, সুন্দর খিলানের অর্ধেকটাই এখন কংক্রিটের নীচে, অপরুপ কারুকাজ সময় আর সংস্কার’এর সাথে পেরে না উঠে হারিয়ে গেছে চিরদিনের মত, সব ইতিহাস ঢাকা পড়েছে আজ লালবাগের ব্যাস্ততায়, সরু রাস্তার মতই সরু হয়ে এসেছে আমাদের পেছনে ফিরে তাকাবার চোখ।

এতকিছুর মাঝেও ২০০৩ এ বুয়েটের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট আর উৎসাহী কিছু লোকের শুরুর জন্যই সরকারী ও বৈশ্বিক নজর বেড়েছে অনেক, নতুন “লাইট এন্ড সাউন্ড” শো’টা হয়েছে অসাধারণ এক আয়োজন। শব্দ আর আলোর বর্ণিল খেলার পাশাপাশি সৈয়দ শামসুল হকের স্ক্রীপ্ট, আসাদুজ্জামান নূর আর সুবর্ণা মোস্তাফার কন্ঠে ইতিহাস যেন উঠে আসে কালের সীমানা ছাপিয়ে চোখের সামনে। (এখানেও কিছু হতাশা আছে, লাইট শো’তে এতবেশী চারপাশের “লাইট” তাতে সত্যিকারের আমেজ নষ্ট হয়। বস্তুত এখন লালবাগকে বড়ই বেমানান লাগে ঐ আধুনিক প্রযুক্তির সুউচ্চ অট্টালিকার ব্যস্ত লালবাগে)!

পরিশেষে আমার শুধু মনে হয়ঃ
“৭ কোটি থেকে ১৭ হয়েছি হে বিমুগ্ধ জননী!
টিকে থাকাই সার্থকতা, পেছনে ফিরে তাকাতে পারিনি”!https://www.facebook.com/media/set/?set=a.10206782916081179.1073741850.1523718371&type=1&l=e9ff00afe8

Monday, May 11, 2015

আত্মসমর্পন

হুমায়ুন আহমেদ এর বইয়ের বদৌলতে প্রথম লাইনটি প্রবল জনপ্রিয় কিন্তু পরের লাইনগুলোও পড়ে ফেললে মূল অর্থটা আলাদা হয়ে ধরা দেয়, কতইনা সুন্দর ও সত্য! বিশ্বাস আর আস্থার জায়গা "একেকজনের একেকজনে" থাকে কিন্তু সেগুলো সবই আসলে "আপেক্ষিক"! 
সত্যিকারের আস্থা, স্বস্তি ও আশ্রয়, তুমিই; হে পরম করুণাময়!!!

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে ॥
বাসনার বশে মন অবিরত ধায় দশ দিশে পাগলের মতো,
স্থির-আঁখি তুমি মরমে সতত জাগিছ শয়নে স্বপনে ॥
সবাই ছেড়েছে, নাই যার কেহ, তুমি আছ তার আছে তব স্নেহ--
নিরাশ্রয় জন, পথ যার গেহ, সেও আছে তব ভবনে।
তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর,সমুখে অনন্ত জীবনবিস্তার--
কালপারাবার করিতেছ পার কেহ নাহি জানে কেমনে ॥
জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি, তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যত পাই তোমায় আরো তত যাচি, যত জানি তত জানি নে।
জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর লোকলোকান্তরে যুগযুগান্তর--
তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে।



মাঝে মাঝে হুমায়ুনের লেখা পড়ে শ্রদ্ধায় মাথা আরো নুয়ে আসে, আফসোস হয় এই জীবনে এক মহামানবের পদধূলি নেয়া হয়নি! আর তিনিই যখন আরেক কবি'র একটি কবিতার সামান্য একটি লাইনের ব্যাপ্তি বুঝিয়ে দেন তখন সত্যিই শ্রদ্ধা-সম্মান ছাড়িয়ে আরো গভিরবোধের সন্ধান মেলে!
আমার কাছে যা "আত্মসমর্পন"!
সেই একমাত্র চিরসত্যের কাছে!

চির পরিচিত

আমার বাড়িতে নিজ এলাকায় একটা চেম্বারে একদিন :
একজন মধ্যবয়েসি ভদ্রমহিলা ঢুকলেন। 

- কি বাজান! কেমন আছ?

আমি বরাবরের মত নিজের স্মৃতিশক্তির সবটুকু উজাড় করে বোঝার চেষ্টা করছি কে ইনি!?
- আমি... ঠিক চিনলামনা আপনাকে।

- আমারে চিনলানা!!! হা...রে...বাজান আমারে চেনোনা! আমি তুমার অমুক পাড়ার অমুক কাকার আমুক হই! তুমারে এই এট্টু দেখছি!

- (আমি খুব লজ্জিত ও কাঁচুমাচু হয়ে) না মানে আমি তো আসলে বাড়িতে অত থাকিনাই তাই সবাইরে চিনিনা; আস্তে আস্তে চিনব!

এরপর অনেক কথা হইল তারে একটা এক্স রে করতে বল্লাম ভাংগা পায়ের প্লাস্টার খোলার জন্য। বল্লাম এক্স-রে টা হাসপাতালে করিয়ে আমাকে কোয়ার্টারে দেখাইয়েন!

- তুমার কোয়ার্টার তো চিনিনা!
- হাসপাতাল চেনেনা না; অইখানে গিয়ে আমার নাম বললে কাউরে দেখায়ে দিবে! হাসপাতালের ভিতরেই কোয়ার্টার!

- তা বাবা তুমার নাম জানি কি!???

"মেধাবী" ছাত্র

বাস চাপায়; পানিতে ডুবে; যে কোন দুর্ঘটনায় মেডিকেল ; বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র - ছাত্রী মারা গেলে পত্রিকায় শিরণাম:
"....  "মেধাবী" ছাত্র - ছাত্রীর মৃত্যু।"
আর কোন ডাক্তার বা যত বড় পদধারীই হোক; শিরণাম:
" মি: "এক্স" এর মৃত্যু।"
.
.
.
.
.
.

পাশ করার পর আপনার আর মেধা নাই; আপনি একটা....  "যা..তা"!

খেরোখাতা

আমি আমার জীবনটা এভাবেই এই সাদামাটাভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই! তবে পারব বলে মনেহয় না; আমার চারিপাশে অনেক রকম ক্লেদের আতিআদরণীয় চাষবাস! তার অনেকটা আমার গায়েও লাগে; আমি একজন পারিবারিক জীব হিসেবে কাউকে কাউকে আকড়ে-জাপটে রাখতে ভাই; এতে তাদের তার গায়ের সুগন্ধ -উত্তাপ ছায়া যেমন আমি উপভোগ করি; তেমনি কখনো কখনো আদরের সাথে গায়ে মাখা কাদাটুকুও আমার লাগে লেপ্টে যায়; আমি আতকে উঠি! কিন্তু ঐ পর্যন্তই!  আমার আর কিছুই করার থাকেনা; চেপে যাই; চেপে রাখি! এই এই এলি চেপে রাখাটুকু এক্কেবারেই নিজের; নিজস্ব!এইটা আর কারো না!

আমি আমার শিক্ষককে আনুভব করছি এখন; আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক;আমার সারা জীবনের সবচাইতে বড় আশির্বাদ আমার বাবা! এখনও আমি তোমার কেশাগ্রতুল্য হতে পারিনি; যতসামান্যটুকু আসমান্যতাও নিজের মাঝে নিতে পারিনি; কি করে আর পারি!বুঝতেই সময় চলে গেল এক জীবন! এমনই মহামূর্খ আমি!

খোদা যেন আমাকে আরো তার মত করেন! তাকে তেমন রাখেন যেমন করে তিনি তার সবটা দিয়ে আমাকে আগলে রেখেছেন আমার সারাটা সময়!

২৬.০৩.১০১৫