Friday, December 26, 2014

মানুষকে মানুষ করা লাগে ; হওয়া লাগে

নাইট ডিউটিতে আজ দলবলসহ এক লোকাল "হাম্বাদিক" তার ৯ মাসের শিশুকে নিয়ে আসছে; ইপিলেপ্সি উইথ নিউমোনাইটিস (ণিউমোনাইটিস এর কারণ হল খিঁচুনির মাঝেই আবার তার হাবলু মাকাল ফল বউটা বাচ্চাকে দুধ খাইয়েছে!) নিয়ে আসা শিশুকে তাদের হম্বিতম্বিকে ইগনোর করেই চিকিতসা দেয়া হইল - ভর্তি করে দিলাম ; বল্লাম খিঁচুনি আবার হলে কিন্তু ফরিদপুর নিতে হবে!তারাও আপত্তি করলনা।

এরমধ্য দুইটা মারামারির কেইস আসছে ; তাদের একজনের আঘাত বাম চোখের নিচে - খুব কষ্টে চোখ বাঁচিয়ে "নাইলন" দিয়ে সেলাই দিলাম! (এখানে সিল্ক/প্রোলিন নাই! দোকানেও নাই! সেলাই দেয়ার জন্য সুতা পরানোর সুই; নাই কোন টুথ ফরসেপ;স্কীন মার্জিন কাটতে হল একটা প্লাস্টিকের হাতলওয়ালা কাগজ-কাটার কাচি দিয়ে!) দুইজনের চেহারা মুটামুটি দেখার মত হইলে তারা শুরু করল "২৬" দিতেই হবে আলাপ! আমুক ডিজি তমুক চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলেন এইসব । সেইটাও ভুলায়ে ভালায়ে এড়িয়ে গেলাম।

ততক্ষণে হাম্বাদিকের ছেলেটা স্ট্যাবল; আর খিঁচুনি হয়নাই; এইবার বাসায় যাবে ওষুধ নিয়ে! কয়েকবার দেখে আসছি আর শেষবার ছাড়পত্র; তাও লিখে দিছি!

এইবার হাম্বাদিক সরাসরি বলল :"যাক এইবার একটু সাংবাদিকতা করি; (আমি ভাবলাম ভিক্টিমের নাম ধাম; আঘাতের ধরণ এইসব জানতে চাইবে!) শিতের দিন; আমারো পকেট খালি; আসেন একটু পকেট গরম করি ; আপনারে কিছু দেই আমি কিছু নেই! আমিও খুশি আপনিও খুশি! "

আমি থ! শুধু বল্লাম : "আপনার বাচ্চাটা ভালো আছে এইটা খুশির কিছু না!?"

বলদায় খালি বলদার মত হাসে আর হাত কচলায়! আমার মনে প্রশ্ন জাগে : "ফুটফুটে বাচ্চাটা কি মানুষ হবে!? এইরকম আবর্জনা হবে নাতো!?'

posted from Bloggeroid

Wednesday, December 17, 2014

হাউ দে ডু।ইট! হাউ???

ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা' কথাটা খুবই প্রচলিত! দেশে দেশে সে সে দেশের সং্খা গরিষ্ঠ লোকের ধর্ম (টার্গের কঞ্জুমার বাড়ে!) নিয়ে ব্যাবসা হয়!

আমাদের দেশেও ইসলাম নিয়ে ব্যাবসা হয়। মোল্লা - মৌ-লোভি'রা আল্লাহ'র নামে ব্যাবসা করে ; তাবিজ - কবজ দেয়; দাওয়া থেকে দিলে খুশ হাওয়া; সবকিছুতে আল্লাহর নামে তারা দুটো করে খায়। এদেশের ফুটপাতের হুজুর ("দাড়িয়াল" ভাই) থেকে আলিশান দালানের নুরানি বাবা সবাই কমবেশি আলাহর নামে ব্যাবসা করে।

তাই বলে টিভিসি তে "আল্লা লকেট" নিয়ে এমন ব্যাবসা! আপনি জাগতিক যত সুবিধার কথা মাথায় আনতে পারেন সেগুলো তো আছেই; সাথে "চেহারা সুন্দর হওয়া"ও আছে! আর এগুলো বলে যাচ্ছে একজন "উদার" তরুণী তার সেই লকেটখানি ঝুলিয়ে-দুলিয়ে! যেন এইটাও বাজারি জিনিষ ; একটা সাপ-খোপ বা হাতি-ঘোড়া!
আবার সাথে দুইটা "আল্লা" লকেট কিনলে একটা "মুহাম্মাদ" লকেট ফ্রি!

কিভাবে পারে এইগুলা!? মুর্খের দল!

হাউ ডেয়ার দে টু ডু দিজ!!! হাউ???

posted from Bloggeroid

Tuesday, December 16, 2014

মুখোশ

ছুটে চলেছি রাতের আধার কেটে সামনে ; সবাই আসলে সামনেই ছোটে তাইনা - পেছনে ছোটা যায়না; সেটাও আসলে পেছন-দিকে-সামনে ছোটা!
ছুটেই চলেছি আমি - আমরা; দিন - রাত; কোন এক উদ্দেশ্য নিয়ে; প্রতিদিন নতুন নতুন তাড়নায় ছুটে চলা! আসলে এই ছোটাছুটির অনেকটাই কি "আযথা"-"অর্থহীন"বা কখনো কখনো "আপেক্ষিক"না!?
মনে পড়ে গেল কোন এক গণিতবিদ নাকি তার প্রায় সারাজীবন কোন এক গাণিতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার পর শেষ জীবনে এসে বুঝেছেন "এই সমস্যাটায় সমস্যা আছে"; মানে একটা ভুল "সমস্যা" সমাধানের চেষ্টায় তার পুরো জীবনের সময়টুকুই চলে গেছে; যেই সময় যে জীবন সে মাত্র "একবার"ই পেয়েছিল!
আহা-ইস! কী অপচয়! লোকটার "একমাত্র" জীবন-সময়টা কোন কাজেই লাগলোনা!
আমার কেন যেন মনে হয় অনেকের মত বা ওই "গণিতবিদ"এর মত আমারো জীবনটা অপচয় হয়ে যাবে! প্রায় আধটুকু সময় পার করেই ফেলেছি (সাধারণ হিসেব নিকেষে; যদিও নিমেষের কথা কে-ই বা বলতে পারে!)
কেন যেন এসব ভাবলে খুব আফসোস হয়; খুব!
অন্য হাজারটা দুনিয়ার মোহ-মুখোশ ও আমাকে স্বস্তি দেয়না!

posted from Bloggeroid

Monday, December 15, 2014

হায়রে জাতি

সারা দুনিয়া যখন সুন্দরবনকে নিয়ে বিচলিত ; ভারত ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে; জাতিসংঘ নিজেই চাইছে সাহায্য করতে সেইখানে আমাদের দেশের হর্তাকর্তাগন কি করবে তাই বুঝে উঠতে পারছেন না! তারা নাকি "জলবায়ু " না কি সন্মেলনে দেশের বাইরে তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে!

সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ বন্ধ করায় যেই সবাই সাধুবাদ দিচ্ছে সেই নৌমন্ত্রি মনে করিয়ে দিলেন: "না! না! ঐটা বন্ধ সাময়িক!"

দেশের মাথারা বলছেন : "যত ভাবা হয়েছিল তত ক্ষতি হবেনা"!
এই হচ্ছে এই দেশের অবস্থা! আরে বলদ গোড়াতেই তো গলদ!!!

আগে তো বুঝতে হবে "সুন্দরবন" কি জিনিষ; পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন; এর মানেটা কি!
বলদ দিয়ে পিটিয়ে হাল চাষ হয়; সুন্দরবন রক্ষা হয়না! এগুলো ভাবতেই মাথায় আগুন ধরে যায়; সব দরকারি যায়গায় আযোগ্য লোক বসে আছে!

ওরা হয়ত ভাবছে ; "ইসসিরে! কত্ত ত্যাল নষ্ট হইয়া গ্যালো! গ্যালন গ্যালন ত্যাল!"
হায়রে আভাগা জাতি ; দাত থাকতে কোনদিন দাতের মর্যাদা বুঝলিনা!

Sunday, April 13, 2014

হল্লা মাত করো


স্কুলে আমাদের বাংলা টিচার ছিলেন গীতা ম্যাডাম ; গীতা মজুমদার! আমার ক্লাস সেভেনে  প্রিয়
মাত্র দুইজন শিক্ষকের মাঝে তিনিও একজন ছিলেন!  বাংলার শিক্ষকেরা যেমন হয় তিনিও ঠিক তেমন ছিলেন; একেবারে মাটির মানুষ!  ক্লাসে পড়া ধরতেন কিন্তু না পারলে চিপ ধরে টান! ছোট একটা বেতও ছিল তার, মিনি কিন্তু মোটাসোটা। বসে বসে সাবধান- আরাম! এগুলোও হত ক্লাসে! তিনি পড়াতেনও খুব ভালো!  বাংলার আর কি পড়াবার থাকতে পারে সেরকম ক্লাস নিতেন না(যদিও বাংলার আমার সেরা শিক্ষক নটরডেমের প্রবাদতুল্য মুখতার স্যার; সেকথা পরে)  তবুও ওই ক্লাস সেভেনের জন্য ম্যাডাম ছিলেন আমার অনুকরণীয়!

তো একদিন ক্লাসে খুব কথা হছে; কোলাহল বেশী হচ্ছে; পেছনের দিক থেকে স্বাভাবিকভাবেই বেশী কথা হচ্ছে! আমারা যারা ম্যাডামের ক্লাসের ভক্ত শ্রোতা ও আতেলশ্রেণী তারা এবার নিজেরাই বলতে লাগলাল ওই অমুক থাম; এত কথা কিসের; সামনের দিকের সব ছেলেরা পিছনে ঘুরে গেছে!  সবাই জানে ম্যাডাম কিছুই বলবেনা ক্লাসে এইগুলা নিয়ে!  কিন্তু তিনি বল্লেন : শোন একটা গল্প বলি! গপ্লের কথায় ক্লাস এইবার একটু শান্ত!
ম্যাডামের কথাগুলো ছিল মোটামুটি এইরকম: তারা ছোয়বেলায় একবার সিনেমা দেখতে গেছেন হলে! তখনকার দিনে মেয়েদের সিনেমা দেখা মানে বিশাল ব্যাপার!  বাসার সবাই মিলে বিরাট আয়োজন করে সিনেমা দেখতে যাওয়া!  সিনেমার এক পর্যায়ে সামনের দিকের দুই ভদ্রলোকের মাঝে লেগে গেল কথা কাটাকাটি!  একজনের মাথার জন্য আরেকজন দেখতে পাচ্ছেনা এইসব!  তারা দুইজন দাড়িয়ে গেলে তাদের জন্য পেছনের অনেকে আবার দেখতে পাচ্ছিল না! তখন তারা বলতে লাগলো "হল্লা মাত করো"! (মাত করো মানে যে কইরো না এইটা আমি পরে বুঝছি) পরে তাদের মত অন্যদিক থেকেও অন্যরা বলতে লাগলো "হল্লা মাত করো" - তাদের এইবার শুনতে সমস্যা হচ্ছে!এইভাবে কিছুসময় পর সবাই বলছে "হল্লা মাত করো"! কিন্তু আসলে মূল হল্লা না কমে নতুন হল্লা বেড়েই যাচ্ছে!

তো সেই "হল্লা মাত কর" তখন থেকেই মাথায় ঢুকে আছে! মানুষের মস্তিষ্ক অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার রেখে দেয় এইটা হয়ত তেমনই কোন ঘটনা!  কিন্তু মাথার ভিতর বসে যাবার কারণে আমি এই হল্লা মাত কর সিচুয়েশনে কথা বলিনা! বলতে পারিনা কিন্তু লোকের এই আজেবাজে কথার "হল্লা" শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি! চিতকার করে ; কন্ঠনালী চিরে বলতে ইচ্ছা করছে: "হল্লা মাত করো"(উর্দূ বলা যাবেনা তাই বলতে হবে "থাম সবাই" অথবা "অফ যা"!)

১০.০৪.২০১৪

Friday, March 7, 2014

শুন্যতা

আজ খুব গরম পড়েছে। ফেসবুকে কার যেন স্ট্যাটাস দেখলাম সে বলেছে আজ বছরের সবচেয়ে গরম দিন।
আমি বাসার গলিতে ঢুকেছি মাত্র..., এমনিতেই এই রোদে বাইরে বেরিয়ে জ্যামে-ঘেমে মেজাজ সপ্তমে আছে তারপর আবার গলির মুখেই জটলা! ইচ্ছা করেও সরু গলিটা এড়িয়ে যাওয়া গেলনা ।
একটু ভেতরে যেতেই দেখলাম একজন বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা রিক্সা ছেড়ে মাটিতে বসেই কাঁদছে । কী ব্যাপার!? তারপর যা জানলাম তা মোটামুটি এরকমঃ

তিনি একজন মহিলা যাত্রি নিয়ে খিলগাঁও থেকে এই যাত্রাবাড়ী এসেছেন ভাড়া ৫০ টাকা ঠিক করে, তাঁর যাত্রী মাঝপথে তাকে থামিয়ে কিছু বাজারও করেছেন তাঁর কাছ থেকেই নেয়া ২০০ টাকায় এই বলে যে, তাঁর টাকার ব্যাগ হারিয়ে গেছে তিনি বাসায় গিয়ে সব একসাথে দিয়ে দেবেন। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো কিন্তু তিনি রিক্সা থেকে নেমে আর ফিরে আসেননি। মধ্যদুপুরের রোদ মাথায় করে রোদে পোড়া শরীরে, মলিন চেহারার, শেষ বয়সের হাশেম মিয়া প্যাডেল মেরে উপার্জন করা তাঁর পাওনা টাকা পাবার আশায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত মাথায় হাত দিয়ে পথের পাশে বসেই কাঁদছেন আর বলছেনঃ “বাবা কয়ডা টেকা নিয়া রিক্সা জমা দিয়া বাজার সদাই করমু, সারাদিন চালাইতে পারিনা বাবা...শরীরে কুলায়না বাবা... আমারে এইরকম ঠগ দিলো বাবা...!”

তাঁর আর্তনাদ আমদের সবার বুকে গিয়ে বাধে। আমি কোথায় যেন একটা শুন্যতা অনুভব করি, মানুষ এমন হয়! ঘটনাগুলো আমাদের জানা নয় তা না কিন্তু এই আশীতপর বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা! যে এই টগবগে সুর্যের নীচে শেষ বয়সের মলিন পেশী দিয়েই রিক্সা চালায়। আমরা যারাই ছিলাম সবাইকে বললাম তাঁর জন্য কিছু দিতে, এবং আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম সবাই কিছুনা কিছু দিতে চায়! শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতে আমরা বেশ কিছু অর্থ তুলে দিতে পেরেছিলাম, কিন্তু আমাদের তুলে দেওয়া অর্থ কি তাঁর পরিশ্রম করা অর্থ এভাবে হারানোর দুঃখকে ভুলিয়ে দিতে পারবে? আমরাই কি আমাদের নিজেদেরকে বিবেকের কাছে মাথা তুলে দাড়াতে পারব?
হয়ত এখানে অনেক যুক্তিপুর্ণ কারণ থাকতে পারে, যাত্রীটি বাসায় গিয়ে হয়ত ভুলে গেছেন...বা অন্যকিছু... কিন্তু তাতেই কি সব দায় এড়ানো যায়?

আমরা আমাদের যেন এত ছোট না করি যে কয়েকদিন পর আমাদের বিবেক, সততা, মমতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা এগুলোকে গল্পের বইয়ে খুজতে হয়!
September 13, 2011 at 7:02pm

হায় বাংলা গান


রাতে ওয়ার্ডে ক্লাস করছি, স্যার গুরুগম্ভীর ক্লাস নিচ্ছেন...হঠাৎ কোন অ্যাটেন্ডেটের জোরাল গলার ফোন বেজে উঠলো... “ছ্যাইয়া দিলমে আনা রে...মুঝে লেকে জা না রে...ছাম ছামা...”,আমরাও বোরিং ক্লাসের ফাকে মজা পেলাম। মাঝে মাঝেই এই মজাগুলা ভালই লাগে, স্যারেরও তেমন কিছু করার থাকেনা। এ যেন এক অবধারিত মজার ব্যাপার। ক্লাস শেষে খেতে গেলাম ক্যান্টিনে। সেখানে শুনলাম “…খুশনাসিবসে মুঝে পেয়ার ইতনা মিল গ্যায়া...”, মনে পড়ে গেল সিনেমাটা প্রথম দেখার কথা। কি একটা উপলক্ষে সব কাজিনরা মিলে দেখছিলাম। তখন ব্যাপক লাগছিল সিনেমাটা, কি দারুন গান সব, আর এই গানের শুরুটাতো ভোলাই যাবেনা!
ফিরে আসছি হস্টেলে, রাজু মামার হোটেলে তখন বাজছে “হাম তুমহারে হ্যায়, তুমহারে সানম, জানে মান মহাব্বাত-কি কাসাম... হ্যায় কাসাম...না জুদা হঙ্গে হাম”। আরেকটু সামনে এগোতেই শুনলাম বেশ আস্তেই বাজছে, “আশিক বানায়া আপনে...” হস্টেলে ঢুকে গেছি। টি ভি রুমে অনেকের ভিড় যেটা আমাদের হস্টেলে কেবল বাংলাদেশের ক্রিকেট আর বার্সা-রিয়ালের খেলা হলেই দেখা যার। না, আজ ওসব কিছুনা । সবাই কোন ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড গিভিং দেখছে...সেখান থেকে সেই পরিচিত ঢংয়েই ভেসে এল, “...রুখ জায়েগি...(সম্মিলিত হোই...হোই...) আপ কা কিয়া হোগা, জানাবে আলি...”।
এইবার আমার একটা কথা মনে হল, “আজ একটা বাংলা গানও শুনলাম না!” হিন্দি গান আমি শুনিনা তা না বরং ভালো লাগার গানগুলো বার বার শুনি, একধরনের মুগ্ধতা নিয়েই শুনি কিন্তু তাই বলে কি বাংলা গানের এতই করুন দশা যে সব্বাই মিলে শুধুই হিন্দি গান শুনব?
আমাদের বাংলা গানের যে আফুরান ভান্ডার তা রেখে আমরা টিভি চ্যানেলগুলোর চমকদার বিজ্ঞাপনের তাড়নায় হিন্দি ঠেসে খাব আর বাংলার কথা ভুলে যাব? তাই কি হয়?
আমাদের দেশের গান শোনার রুচি বা ট্রেন্ডে একটা বেশ বড়সড় পরিবর্তন এসেছে । আমাদের আগের সেই ব্যান্ড সংগীতের ঐতিহ্যটা নেই, সেই আইয়ুব বাচ্চু, মাইলস, সোলস, হাসান, বিপ্লব থেকে শুরু করে এই ব্লাক পর্যন্ত, এখন যারাই আছে তারা সবাই কি সফল? শিরনামহীনএর মত কয়টা দলই বা এখন গান গান “দল” হিসেবে? সবাই স্টেজ শো’তে ব্যাস্ত। আর আমদের টিভি ত আছেই, মধ্যরাত পর্যন্ত গান হয়, তাও লাইভ, মধ্যরাত পর্যন্ত!! খুব ভাল ভাল শিল্পীরা আসেন, মানুষ ফোনও করে। প্রথম প্রথম দু একটা চ্যানেল যখন অনুষ্ঠানটা দেখাত তখন দেখতাম মানুষ মানে শ্রোতা-দর্শকেরা তাদের গানের প্রশংসা করতেন, আবদার করতেন এইটা গান, ওইটা গান। এখনও এসব অনুষ্ঠান হয়, শুধু হয় বললে ভুল হবে, লাগাতারভাবে-উপুর্যুপুরি সবগুলা চ্যানেলে একসাথে হয়! এবং অনেক্ষন পর কেউ ফোন করেন এবং যথারীতি যিনি গায়ক বাঁ গায়িকা “...ও অমুক ভাই কেমন আছেন? আপনার সাথে ত দেখাই হয়না...”, আর কিছু ফোন আসে (বিশেষ করে গায়িকা হলে) “...ওহ আপু আপনাকে যা সুন্দর লাগছে, আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান...” ...গ্লি গ্লি গ্লি হাসি!!
আমি মোটেই এসব অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে না কিন্তু আমার সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি যখন একটা স্থূল বানিজ্যিক রুপ নেয় আমার খারাপ লাগে! খুব খারাপ লাগে!! আমার মন প্রশ্ন খুজতে চায়, কেন আমাদের দেশের মাটিতে বিশবকাপের মত খেলা উদ্ধোধনীতে “...পোলা তো নয় আগুনের গোলা”, “... দমাদম মাস্তকালান্দার” বাজে?
আমাদের কি ভাল গান নাই, আমরা ভাল গান গাইতে পারছিনা, কোনটাই শোনার মত নয়?
আমি এই যে লিখছি এখনো শুনতে পাচ্ছি, “...ডোন্ট সে আলবিদা, না কাহো আলবিদা...”! আমি আসহায় বোধ করছি...

বইমেলা আর বই

দেখতে দেখতে আরো একটা বছর চলে গেল! এই ফেব্রুয়ারি মাসে বছর চলে গেল! না চোখ কপালে তুলবেন না। মানে এই বছরের মত বইমেলাটা শেষ হয়ে গেল, ২১ চলে গেল, ২১ থেকে ২৮ ও চলে যাচ্ছে! বইমেলা নিয়ে এই বোধ হয়ত আমার মত আরো অনেকেরই। মেলাপ্রিয় এই জাতি এই বইয়ের মেলাটাকেও বড় ভালোবাসে!

প্রতিবছর বইমেলা আসলেই নতুন বইয়ের জন্য মনটা কেমন আনন্দে ভরে ওঠে; কয়টা বইইবা কিনতে পারি (কত্ত চমৎকার বই); ভাবতে থাকি কে কে কি কি বই কিনলো আর ওদের কাছ থেকে বইগুলো কবে নিয়ে পড়ে ফেলা যায়! ছোটবেলা থেকেই বাসায় পড়ে পড়ে ধূলো পড়া আব্বার বইগুলো পড়ে ফেলেছিলাম! আমার নজরুল প্রীতি আর বয়সের চেয়ে বেশী গম্ভীর হয়ে থাকার কারণও মনেহয় অই! কিচ্ছু বুঝিনাই কড়ি দিয়ে কিনলাম; পথের দাবী;  পৃথিবীর পথে পড়ে ফেলেছিলাম!  কী মোটা মোটা বই! ছোটবেলার সেই ধীরগতিতে ওই বই পড়া সম্ভব হয়েছিলো কেবলমাত্র পড়ার একটা "ক্ষুধা" থাকার কারনে! এখনকার শিশু-কিশোর-তরুণ মনগুলো কি সেই ক্ষুধা সেইভাবে অনুভব করে?

অবশ্য এটা খুব খুশির কথা বইমেলায় আসা এত বইয়ের পাঠকের মত যেটা আমি এখনো অনুভব করি সেটা হলো বই পড়ার ইচ্ছা! এখনো আমার মনে হয় রাত দিন চোখমুখ গুজে একটা বই পড়ে ফেলার মত আনন্দের আর কিছু হয়না! যদিও সেই ফুরসত অনেকটাই কমে গেছে, “চলচিত্র” তার অনেকটা জায়গা নিয়ে নিয়েছে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি একটা “ভালো” বই একটা চলচিত্রের চাইতে শক্তিশালী।
কীভাবে?
এই যে যখন কেউ একটা উপন্যাস পড়ে, তখন সেই উপন্যাসের চলচিত্রায়ণ হতে থাকে পাঠকের মনের ভেতর সে চাক বা না চাক, লেখকের বর্ণানা আর পাঠকের কল্পনার মিশেলে তৈরি হতে থাকে এক একটা চেহারা, একটা বাড়ির উঠান-ঘাস বা একটা ধু ধু বালু-মাঠ বা একটা পাহাড়-বন-সমুদ্র এমনকি একটা মায়াবতী চেহারা, ক্লান্ত বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল, ঠোটের কোনের হাসি অথবা ধরা যাক কোন সুদর্শন যুবা যার চাহনিতে তীব্র আত্নবিশ্বাস, চোয়ালে ফুটে ওঠা মনের ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা সব স...ব সবকিছু... যা কিছু মানুষকে কল্পনার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার সব রঙ মিশিয়ে সে সেই বইয়ের লেখাগুলোকে দৃশ্যায়ন করে ফেলে। সেখানে সেইই তার সেই নিজের জন্য তৈরি করা সিনেমার সত্যজিৎ!

চাইলেই পাঠক তার মনের মত করে তৈরী করে নিতে পারে সমস্ত খুঁটিনাটি! এবং এই পুরো অসাধারন একটা ব্যাপারের জন্য কি পাঠককে খুব কষ্ট করতে হয়! মোটেই না। বরং যতক্ষণে লেখাগুলো কোন অর্থ বহন করে পাঠকের নিউরণে যায় সেই নিমিষ সময়েই অযুত কোটি শব্দ-রং মিলিয়ে একটা কল্পদৃশ্য মস্তিস্কে তৈরী হয়ে যায়, এবং এই ব্যাপারটাই পাঠককে তার আজান্তেই বইয়ের পরের পাতাতে নিয়ে যায়! এ এক অসাধারণ ব্যাপার! কখনো সে আনন্দে হেসে ওঠে, কখনো চোখের কোনে অশ্রু জমে, কখনো ক্রোধ, ঘৃণা, হাহাকার বা কোন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা! অনুভুতির জগত নিয়ে এত সুন্দর খেলা করার সুযোগ বই পড়া ছাড়া আর কোথায়! আর নিজের অনুভুতির জগতকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য হাজার হাজার বই তো পড়েই আছে!

আমি মনে করতে পারি প্রথম যখন ছোটদের “ডেভিড কপারফিল্ড” পড়ে এক বিকেল কেঁদেছিলাম। (হয়ত পৃথিবীর মানুষ দুঃখবিলাসী বা পৃথিবীর মধুরতম সংগীত, শ্রেষ্ট কবিতা-গান সব বিরহের – এই কারণে কাঁদার বইয়ের কথাই মাথায় আছে) কিন্তু সেই শেষ বিকেলের ছলছল-চোখজল’এর যে অনন্দ তা এখনো আমি অনুভব করতে পারি। শরতের (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) গ্রীষ্ম-বর্ণনা আর চরিত্রের খুঁটিনাটির যে নিখুঁত বিবরণ তা আজো পাঠককে ভাবায়, প্রেমে পড়ে দেবদস হওয়াও যে “একটা কিছু” “হওয়া” তা তো শরৎবাবুই বুঝিয়ে গেলেন। নজরুলের বিদ্রোহী থেকে সুকান্তের ছাড়পত্র- কত শত আবেগের দোলা। আর রবিবাবু একাই যা লিখে গেলেন – বাঙ্গালি তার নিত্যদিনকার সুখ-দুখ-সব অনুভুতিতে সেখানেই আশ্রয় খোঁজে। আর আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, অনুভব করি- প্রকৃতি দেখার চোখ বিভূতিভূষণের যেমন ছিল তেমনটা আর কারো নয়। কেউ যদি প্রকৃতি দেখার জন্য তার মনের হাজারটা চোখ মেলে চাইতে চায় তবে যেন সে বিভূতিভূষন-এর লেখা পড়ে! ছোট ছোট বিষয় নিয়ে যে কি মজা করে ভাবা যায় তা’র জন্য সুকুমার, রহস্যের হাতেখড়ি সত্যজিৎ, যৌবনে জীবনানন্দের “বনলতা” খোঁজা... এভাবে বলতে থাকলে মানিক, সঞ্জীব, সুনীল, শীর্ষেন্দু, শরদিন্দু্‌, সমরেশ থেকে আমাদের জাফর-হুমায়ূন (এদের নিয়ে বলা শুরু করা যাবেনা, শুরু করলে থামা মুশকিল হয়ে যাবে... বোধকরি আমাদের প্রজন্মটা বই পড়া নতুন করে শিখল এদের জন্য; এহ এ্যা তিন গোয়েন্দা-মাসুদ রানা চলে আসছে...) পর্যন্ত একটা বিরাট গদ্য রচনা হয়ে যাবে কোন উপযুক্ত বয়ান আমি না করতে পারলেও। (চট করে এই এত্তগুলো নাম চলে এসেছে ভাবলে আরো আজস্র মণি-মুক্তার দেখা মিলবে নিঃসন্দেহে)

আগের দিনে মানে এক দশক আগেও লোকে হয়ত তার বাসায় একটা ভালো পরিমাণ বই সাজিয়ে রাখাকে একটা রূচি বা আভিজাত্যের পরিচয় হিসেবে দেখত কিন্তু এখন মনে হয় সেই জায়গাটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। লোকে তাদের দামি ফ্ল্যাটের দামি জায়গাটা আর কাগজ দিয়ে ভরতে রাজী নয়। দামি দামি শো-পিস বা দামি কোন অডিও ভিজ্যুয়াল ইন্সট্রুমেন্ট সেই জায়গাটা দখল করছে। মোটকথা বইয়ের দাম লোকের কাছে কমে গেছে। এত সহজেই যখন হাতেই তালুতে সব, চাইলেই একটা ধুন্ধুমার সিনেমা চালিয়ে দেয়া যায়, শুধু চালিয়েই না ফরমায়েশমত যখন তখন থামা-চালুও করা যায় তখন আর কষ্ট করে বই কে পড়ে! কিন্তু বই না পড়ে পড়ে যে আমাদের “বোধ”-এর জগতকে ভোতা করে দিচ্ছি তা কি কেউ ভেবে দেখছি?

তবে বই মানেই তো আর গল্প-উপন্যাস-কবিতা না, ছাত্রের নাহয় বাধ্য হয়ে বইকিছু কিনতে হয়-কাধে কাধে বইতে হয় কিন্তু “চেক-বই” টাইপের বইয়ের কদর তো কিছুমাত্র কমেনাই সেটা আর বলে দেয়া লাগেনা।

সে সব কথা থাক, কি বলতে কি বলে ফেলছি! তবে আমি আমাদের এই প্রজন্মকে শুধু একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, সেই ছোটবেলায় প্রমথ চৌধুরির “বই পড়া” থেকে কিছু যদি নাও শেখা যায়, “বই” পড়ে যা কিছু শেখা যায়, যা কিছু “অর্জিত হয়”(এর চাইতে ভালো বাংলা মাথায় আসছে না) তার কিন্তু কোন বিকল্প নাই। হাজার গান-সিনেমার মাঝে বইয়ের জায়গাটা কিন্তু সবার উপরে, বলতে গেলে শুরুর দিকের ব্যাপার। তাই এই বই ব্যাবসার, ব্যাবসায়ী লেখকের যুগে যদি আমরা আরো একটু বই পড়তে পারি তবে মন্দ হয়না, তাইনা! শত সহস্র সিনেমা গানের মত অক্ষরের বইগুলো কতশত অনুভূতির ঝড় তোলার জন্য বসে আছে, এখন শুধু নেবার অপেক্ষা অর্জনের অপেক্ষা!

আর সেই সাথে আমি আমার শৈশবের সেইসব বন্ধুদের কথা মনে করতে চাই যাদের বইগুলো আমার ছেলেবেলা’কে এত অনন্দময় করেছিল। সেইসাথে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আবু সায়ীদ স্যারের কথা বলতে চাই যে সোনার হৃদয়ের মানুষটা হাজারো শিশু-কিশোরের মনকে “আলোকিত” করে তুলছেন! যার জন্য এখন সবাই মিলে একটা আলোকিত বাংলাদেশের অপেক্ষা করতেই পারি!