Friday, March 7, 2014

শুন্যতা

আজ খুব গরম পড়েছে। ফেসবুকে কার যেন স্ট্যাটাস দেখলাম সে বলেছে আজ বছরের সবচেয়ে গরম দিন।
আমি বাসার গলিতে ঢুকেছি মাত্র..., এমনিতেই এই রোদে বাইরে বেরিয়ে জ্যামে-ঘেমে মেজাজ সপ্তমে আছে তারপর আবার গলির মুখেই জটলা! ইচ্ছা করেও সরু গলিটা এড়িয়ে যাওয়া গেলনা ।
একটু ভেতরে যেতেই দেখলাম একজন বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা রিক্সা ছেড়ে মাটিতে বসেই কাঁদছে । কী ব্যাপার!? তারপর যা জানলাম তা মোটামুটি এরকমঃ

তিনি একজন মহিলা যাত্রি নিয়ে খিলগাঁও থেকে এই যাত্রাবাড়ী এসেছেন ভাড়া ৫০ টাকা ঠিক করে, তাঁর যাত্রী মাঝপথে তাকে থামিয়ে কিছু বাজারও করেছেন তাঁর কাছ থেকেই নেয়া ২০০ টাকায় এই বলে যে, তাঁর টাকার ব্যাগ হারিয়ে গেছে তিনি বাসায় গিয়ে সব একসাথে দিয়ে দেবেন। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো কিন্তু তিনি রিক্সা থেকে নেমে আর ফিরে আসেননি। মধ্যদুপুরের রোদ মাথায় করে রোদে পোড়া শরীরে, মলিন চেহারার, শেষ বয়সের হাশেম মিয়া প্যাডেল মেরে উপার্জন করা তাঁর পাওনা টাকা পাবার আশায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত মাথায় হাত দিয়ে পথের পাশে বসেই কাঁদছেন আর বলছেনঃ “বাবা কয়ডা টেকা নিয়া রিক্সা জমা দিয়া বাজার সদাই করমু, সারাদিন চালাইতে পারিনা বাবা...শরীরে কুলায়না বাবা... আমারে এইরকম ঠগ দিলো বাবা...!”

তাঁর আর্তনাদ আমদের সবার বুকে গিয়ে বাধে। আমি কোথায় যেন একটা শুন্যতা অনুভব করি, মানুষ এমন হয়! ঘটনাগুলো আমাদের জানা নয় তা না কিন্তু এই আশীতপর বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা! যে এই টগবগে সুর্যের নীচে শেষ বয়সের মলিন পেশী দিয়েই রিক্সা চালায়। আমরা যারাই ছিলাম সবাইকে বললাম তাঁর জন্য কিছু দিতে, এবং আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম সবাই কিছুনা কিছু দিতে চায়! শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতে আমরা বেশ কিছু অর্থ তুলে দিতে পেরেছিলাম, কিন্তু আমাদের তুলে দেওয়া অর্থ কি তাঁর পরিশ্রম করা অর্থ এভাবে হারানোর দুঃখকে ভুলিয়ে দিতে পারবে? আমরাই কি আমাদের নিজেদেরকে বিবেকের কাছে মাথা তুলে দাড়াতে পারব?
হয়ত এখানে অনেক যুক্তিপুর্ণ কারণ থাকতে পারে, যাত্রীটি বাসায় গিয়ে হয়ত ভুলে গেছেন...বা অন্যকিছু... কিন্তু তাতেই কি সব দায় এড়ানো যায়?

আমরা আমাদের যেন এত ছোট না করি যে কয়েকদিন পর আমাদের বিবেক, সততা, মমতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা এগুলোকে গল্পের বইয়ে খুজতে হয়!
September 13, 2011 at 7:02pm

No comments:

Post a Comment