Sunday, December 15, 2019

বুক রিভিউ: নির্বাসন - হুমায়ূন আহমেদ

এই বইটা হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয়তমা স্ত্রী গুলতেকিনের জন্যে লিখেছিলেন এবং তাকে উৎসর্গ করেছিলেন। যদিও উৎসর্গ পত্রখানির দেখা পেলাম না!

বইটিতে জরী নামের একটি মেয়ে এবং তার চাচাতো ভাই আনিসের একটি "এ লস্ট গেম" এর বর্ণনা আছে।

অসম্ভব মায়াময় করে লেখা একটা বই। কেন যেন আমার এখন হ্ন হ্ন করে কান্না পাচ্ছে! কেন যে পাচ্ছে আমি তা নিজেও জানিনা। হয়তো আমার নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এই নাইট ডিউটি করতে এসে!

এখানে কিছু অমীমাংসিত গল্প আছে যেগুলো পাঠককে নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে হয়। আবার হুমায়ূনের অন্যান্য বইয়ের মত ছোট ছোট চরিত্রের সংখ্যাও অনেক, তাদের নিয়ে খুব বেশি কাজও করা হয়নি। তাই অনেকটুকুই অজানা থেকে যায়। অনেক বইয়ের মত এই বইটাও শেষ হয়েছে একটা বিষাদ দিয়ে। এমন গল্পের সমাপ্তি হুমায়ূনের অনেক গল্পেই আছে। খুব পরিচিত মনে হয়। কোথাও এমন পড়েছি পড়েছি মনে হয়।

কিছু চরিত্র আছে বড় চাচা; জিনি বিসমিল্লাহ্‌  খানের সানাই শোনেন; চান তার ছোট ভাতিজির বিয়েতে সকাল থেকেই সানাই বাজুক। জরীর বিয়ে; দুই বোন জরী পরীর মাঝে জরী ছোট। যদিও জরী ভালোবাসতো আনিসকে। কিন্তু যুদ্ধের পর গুলি লেগে আনিস বিছানাবন্দী হয়ে গেলে সেই হিসেব মেলে না। জরীর বিয়ে ঠিক হয় কলেজের শিক্ষকের সাথে! (এখানে এই নাম না দেয়া চরিত্র চিত্রন করতে গিয়ে হুমায়ুন আহমেদ নিজেকে বসিয়েছিলেন বলে পড়তে গিয়ে মনে হল!) যদিও  বড় চাচা জরী আনিসের কথা জানতে পেরে এই বিয়ে একবার ভেঙে  দিয়েছিলেন কিন্তু আবারো নিয়তি জরীকে এই পাত্রের সাথেই বেধে দেয়। যদিও এসবের কারণ কিছু খোলসা করে দেননি লেখক।

শেষদিকে কেনই বা জরীর মা আনিসের মাকে চিনতে চান না। "আতর বৌ" কেন এ বাড়ি ছেড়ে অন্যের হাত ধরে চলে গিয়েছিল সেসবের পরিষ্কার মীমাংসা হয়না। পাঠকের অবারিত সুযোগ আছে নিজের মত করে ভেবে নেবার।

পুরো গল্পজুড়ে একটা হাহাকার ধরে রাখার চেষ্টা ছিল। কেন জরীর ছোটবেলার "সবচেয়ে সুন্দরী' এবং বেতারে গানকরা বান্ধবী কনক উদাস হয়ে যায় তার সৌন্দর্যের প্রশংসায় তা পাঠককে ভাবায়। আনিসের হাহাকার বেদনা পাঠককে ভাবায়। জরীর চলে যাওয়া এমনকি পুরো বাড়িটার এখনা বৃদ্ধ দশার মাঝেও হাহাকার তৈরির চেষ্টা আছে।

০৪/০৯/২০১৯

Sunday, November 3, 2019

সাম্মির প্রথম জি এ

আজ আমার মেয়েটা আবার থুতনি কেটে ফেলেছে!
তাকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে সেলাই দেয়া য়েছে।

সে জ্ঞান ফেরার পর ক্যানূলা সাইটে ব্যান্ডেজ দেখে বলছে:

- আমার তো হতে ব্যাথা পাইনি, তাহলে হতে ব্যান্ডেজ কেন!?
- তাইতো!? 
- তাহলে তোমরা মানা করনি কেন!?

03/11/2019

Wednesday, October 16, 2019

সাম্মির খেলা

কাল রাতে আমার মেয়ে আমাকে বলছে:
- বাবা আসো আমরা বন্ধু বন্ধু খেলি!
- সেটা কিভাবে খেলতে হয় মা!?
- তুমি বাবা হবে আর আমি হব বাবার বন্ধু!

ভাবলাম, বেশ ভালো খেলা! মেয়ে নিজেই বাবার বন্ধু হতে চায়!
আমি বললাম:
- আচ্ছা ঠিক আছে!
মেয়ে আমার:
- তুই কেমন আছিস রে!? (সে "বাবার বন্ধু" হয়েছে! সত্যিকারের বাবার বন্ধু; তো বন্ধুর সাথে তো তুই তুকারি করাই যায়! বন্ধুকে কি আর তুমি আপনি বলে!?)
😆😆😆

১৫/১০/২০১৯

Friday, October 11, 2019

বুক রিভিউ - হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য: হুমায়ুন আহমেদ

এটি হিমু বিষয়ক কোন বই না। পড়তে গিয়ে পাঠক প্রথমেই প্রতারিত হবার সম্ভবনা আছে। মূলত "হিমু" ইমেজকে আশ্রয় করে সংকলিত ও নামাঙ্কিত একটি বই। বইটি এমনভাবে প্রকাশিত যেন মেলায় বিক্রি বেশি হয়। মূলত তখন হিমু বিষয়ক একটি বই সব প্রকাশকই চাইতেন, তাদের আবদার মানতে গিয়েই এমন বইয়ের প্রকাশ। হিমু সম্পর্কে লেখকের যে বাড়াবাড়ি প্রশ্রয় ছিল এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র, লেখক সেটি কখনো অস্বীকারও করেননি।

এই বইয়ের বাড়তি পাওনা বলতে প্রতিটি গল্পের বা লেখার আগে লেখকের কিছু কথা; কিভাবে লেখাটি লেখা হল, লেখা সম্পর্কে লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দ - অপছন্দ বা মতামত। এটুকু বিশ্বাস করে নিলে লেখকের ও তার লেখা সম্পর্কে একটা ধারণা করা যায়।

মোট দশটি গল্প আছে বইটাতে। এর মাঝে "পাপ" বিষয়ক গল্প তিনটি বেশ ভালো। এছাড়া "গন্ধ" গল্পটি ভালো। "জনৈক আব্দুল মাজেদ" এবং শিরোনামের "হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার" এই বইয়ের সবচে দুর্বল অংশ ("গল্প" বলা যাচ্ছেনা এগুলোকে যদিও এগুলো বিভিন্ন পত্রিকা ও প্রকাশনায় গল্প হিসেবে ছাপা হয়েছিল)

গল্পগুলোকে যদি আলাদা করে ব্যবচ্ছেদ করি তবে:

নসিমন বিবি -
ফরিদপুরের নসিপুর বিবির স্বপ্নে পাওয়া "উপহার" বিষয়ক একটি "আধোভৌক্তিক" লেখা। এটাকে হুমায়ূন আহমেদের সাইন্স ফিকশন বললেও ভুল হয়না। সুখপাঠ্য লেখা।

পাপ -
এই গল্পটি হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ১৯৭১ এর অংশবিশেষ। এইও "চিন্তা উদ্রেককারী" লেখা!

পাপ-২
হাজি মান্না মিয়া -
ভালো। ছোট গল্প হিসেবে চমৎকার।

পাপ-৩
সালাম সাহেবের পাপ -
মিসির আলীর একটি গল্প পুরো গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং। বিশেষ করে শেষটা।

দৌলত শাহ'র অদ্ভুত কাহিনী -
এটিকে হুমায়ূন আহমেদের সাইন্স ফিকশন গল্পের মাঝে ফেলা যায়। গাঁথুনিতে চমৎকার একটি গল্প।

শাহ্ মকবুল -
পাগল বিষয়ক গল্প। হুমায়ূন আহমেদের ফেলে যেসব লেখা শাওন থেকে কেনা ট্রাংকের মধ্যে জামাত সেই লেখার একটি পূর্ণাঙ্গরূপ এটি। ভালো তবে কোথায় যেন একটু আটকে যায়, খটকা লাগে পড়তে গিয়ে। একবার পড়ে ধরতে পারিনাই।

পিশাচ -
এটিকে চমৎকার গল্প বলা যায়। একজন মানুষ পিশাচ সাধনা করে যায় অন্তরে ধারণ করে এক সমুদ্র প্রেম আর মায়া।

গন্ধ -
চমৎকার একটি গল্প। গল্পের মাঝে একটা চমৎকার মোড় আছে যেটি দারুণ।

জনৈক আব্দুল মজিদ -
এটাও একটি ফরমায়েশি লেখা। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে একটি ডকুমেন্টারি কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেটা নিয়ে লেখা। এইডস সম্পর্কে সামাজিক বিজ্ঞান বইতে যদি একটা লেখা থাকত সেখানে যেরকম লেখা থাকবে এটি ঠিক সেরকম একটি লেখা। এই লেখা নাকি পাঠ্য বইতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল! সম্ভবত সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবই- এ; বাংলা পাঠ্য বই- এ সাহিত্য হিসেবে না।

হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার -
একেবারেই ফরমায়েশি লেখা। লেখা নেবার জন্যে কেউ অপেক্ষা করছে। তাকে বসিয়ে রেখে একটা লেখা উৎপাদন করে দেবার প্রয়াসেই এই লেখা। যদিও এমন অবস্থাতেও হুমায়ূন আহমেদ অনেক ভালো লেখা লিখেছেন কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। হিমুর সাথে জড়িত সব চরিত্রের সাথে একটি কাল্পনিক কথোপকথন।

১১/১০/২০১৯

Monday, September 23, 2019

Facebook - fakebook

আমি নিজেও ফেসবুক নামের এই "সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে" নিজের "ভালো" (বা প্রথাগত দৃষ্টিতে "খারাপ না" এমন) কিছুই দিই, খারাপ বা প্রকাশযোগ্য কিছু দিইনা। এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া; নিজেকে "ফিল্টার' করে উপস্থাপন। তাই বলে, এমন কিছুই বলিনা, লিখিনা বা পোস্ট করিনা যা সত্যিকার অর্থে "আমি না" বা আমি ওগুলো আসলে আমি "ধারণ করিনা"!

এখন মাঝে মাঝে অনেক পোস্ট দেখে মনে হয় চিৎকার করে বলি:
- ভাই/বোন গো! আপনে যা লিখছেন বা বলছেন তা তো আপনি না, শুধু শুধু "লাইক সিক" কেন করেন! আপনি তো আসলে একটা আস্ত "... যা তা"!!!

কিন্তু পারিনা...
আমিও একটা মেকি, "ফেইক" জীবন বয়ে বেড়াই!

২৩/১০/২০১৯

Tuesday, September 10, 2019

বুক রিভিউ: নি - হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদের সায়েন্স ফিকশন গুলোর মাঝে অন্যতম একটি বই। হুমায়ূনের সায়েন্স ফিকশন মনে হচ্ছে সায়েন্সের সাথে মানবীয় আবেগের একটা দারুণ মিশেল। সেখানে সায়েন্স বোঝানোর তেমন তাড়া থাকেনা বরং আবেগীয় ব্যাপারগুলো যে সায়েন্সের উর্ধে তেমন একটি বার্তা থাকে।

এই গল্পটিও তেমন।

এখানে মুবিনুর রহমান (এই নামটি কিন্তু এন্য গল্পের মত না! মানে আনিস না!) একজন স্কুল শিক্ষক। তাকে ভালোবাসে তার ছাত্রী; অসম্ভব রূপবতী, ইন্দ্রানীর মত দেখতে "রূপা"। এখানে রুপাকে সাধারণ গ্রামের মেয়ে হয়েও অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলতে দেখা যায়, যদিও সে পড়াশোনা নিয়ে খুব বেশী সচেতন না কিন্তু তার চিন্তা খুব পরিষ্কার। একটি গ্রামের মেয়ের সৌন্দর্য অনেক হতেই পারে কিন্তু চিন্তা ও কথা এত সাবলীল হবে এটা বোধকরি স্বাভাবিক না! লেখকও তাই বেশ কয়েকবার অন্য চরিত্রের বয়ানে বারবার বলিয়ে ব্যাপারটা পাঠকের জন্যে গ্রহণযোগ্য করেছেন।

মুবিনুর রহমানের এখানে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক, খুব সিরিয়াস ধরনের শিক্ষক যিনি নিউটন নামের আগে স্যার না বললে শাস্তি দেন, যদিও শাস্তিটুকু সামান্যই। তিনকূলে কেউ না থাকায় তিনি নীলগঞ্জ হাই স্কুলের চাকরি পেয়ে সেখানেই থিতু হন। তার দিক কাটে ঘড়ি ধরে। থাকেন নির্জনে একটা নদীর পাড়ের ভাঙ্গা বাড়িতে, নিজেই রান্না করে খান, নিয়ম করে রুপাকে পড়ান। নেশা হচ্ছে চিন্তা করা আর তার দূরবীন দিয়ে আকাশ দেখা। তার কাছের মানুষ বলতে স্কুলের ইসলাম শিক্ষক জালালুদ্দিন এবং দপ্তরি কালিপদ। দুজনেই মুবিনকে অসম্ভব পছন্দ করেন। এভাবেই চলছিল মুবিনের আর রুপার জীবন।

গল্পের মাঝে হঠাৎই রুপার বড় ভাই রফিক তার স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে নিয়ে হাজির হন নীলগঞ্জে প্রায় তিন বছর পর। (তবে কেন তিনি এতদিন নীলগঞ্জ আসেননি ব্যাপারটি কিন্তু পরিষ্কার না!) রফিকের ইচ্ছা তার পরিচিত ছেলে তানভীরের সাথে রুপার বিয়ে দেওয়া। সেভাবেই সব এগোতে থাকে। রফিকের ছোট মেয়ের রুবাবা স্বাভাবিক হলেও বড় মেয়ে জেবা একটু "অস্বাভাবিক"! এই অস্বাভাবিকতা থেকেই গল্প নতুন দিকে মোড় নেয়।

নীলগঞ্জ হাই স্কুলের হেডমাস্টার হাফিজুল কবির তাকে ১০০ বস্তা গমের হিসাবে ফাঁসিয়ে দেন, রুপার বাবা এলাকার সবচে প্রভাবশালী ব্যক্তি আফজাল সাহেবও তার মেয়ের ভালোলাগার কথা জানতে পেরে মুবিনুরকে জেলে পুরে দেন। কিন্তু তখনই "নি"রা তাকে সাহায্য করে। জেবা একজন নি, জালালুদ্দিন সাহেব, কলিপদ সবাই নি! তবে জেবাই এখানে বেশ শক্তিশালী নি!

"নি" রা হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান। তারা মানুষের মতই কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা থাকে তাদের, তারা চাইলে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। নিজেদের আলাদা মাত্রার জগতে তারা নিজেদের মত যা কিছু সৃষ্টি করতে পারে। প্রকৃতির সন্তান বলে প্রকৃতি তাদের নিজেই রক্ষা করে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের ব্যাতিক্রম কিছু হতে পারেনা। তাই যে জরাজীর্ন ঘরকে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করে এসেছে প্রকৃতি নিজেই সেই ঘরও প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেঙে নিয়ে যায় যখন মুবিনুর রহমান প্রকৃতির নিয়ন ভাঙ্গে।

সবচে শক্তিশালী নি হবার পরেও সাধারণ মানুষ রুপার প্রতি প্রবল ভালোবাসা অনুভব করায় সে রুপাকে নতুন করে তৈরির চেষ্টা করে! কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম ভাঙ্গা যায়না। চাইলেই আলোর গতির চাইতে বেশি গতিতে যাওয়া যায়না। কারণ...

এটিই প্রকৃতির নিয়ম!

০৯/০৯/২০১৯

Sunday, August 18, 2019

বই পর্যালোচনা: জল জোছনা - হুমায়ূন আহমেদ

বইটি অনেক আগের। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত। আগে পড়েছিলাম তবুও আবার পড়ে ভালো লাগলো। তবে "আগে পড়েছিলাম" এটুকু বুঝতে আমাকে শেষদিকে বুড্ডার সাগরেদ ছোটনের এর বদ অভ্যাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে!(কিশোর মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মাঝে শুধু ঐটুকুই মাথায় রেখে দিয়েছে)।

হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো খুব দ্রুত পড়ে ফেলা যায়, এটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

মূল কাহিনী বেশ ছোট। একটি পরিবার দূরে বেড়াতে যাওয়ার সময় আরিচা ফেরি ঘাটের কিছু আগে রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া দুটি শিশুর মৃতদেহ নিয়ে বাইরে থেকে আসা একটি গ্রুপ ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। যেমনটা আসলে হরহামেশাই হচ্ছে এদেশে। তবে ঘটনার সময়কাল এখন থেকে বেশ আগের। তখনকার বাস্তবতা বইটি পড়লে বেশ বোঝা যায়।

এটি একটি রুঢ় বাস্তব গল্প কিন্তু এই  গল্প বুনন করতে গিয়ে ছোট ছোট চরিত্র এসেছে, দুঃখগাথা, প্রেম, সাহস, মায়া এগুলো এসেছে।

চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে এখানে একটি চরিত্র মীরা বা জোছনা; যে কিনা সশরীরে উপস্থিত না থেকেও পুরো গল্পটির বড় স্থান দখল করে আছে! যাদের কাছে আসলে মানুষ বদলে যায় মীরা ছিল তেমন একজন। মীরা জহিরের স্ত্রী, যে বিয়ের কিছুদিন পরেই কোন কারণে মারা যায়। শুধু পেছনে ফেলে যায় জহির, জহির এর বন্ধু মনজুর, মনজুরের  স্ত্রী রেবেকা এবং তাদের কিছু সম্পর্কের টানাপোড়েন। যদিও শেষ দৃশ্যে এসে সব মিটে যায়। বড় বিপর্যয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজেদের গড়ে তোলা ছোট ছোট সমস্যা কাটিয়ে ওঠে।

নিতু এখানে মনজুর দম্পতির একমাত্র আঠারো বছর বয়সী কন্যা। যদিও সে গল্পের নিয়ামক মাত্র এবং এখানে "অপূর্ব রূপবতী"ও নয়! তবে গল্পের প্রথমে কেন রেবেকা মেয়েকে খারাপ দেখাচ্ছে জেনেও সবুজ শাড়ী পড়তে না দিয়ে কমলা শাড়ি পরতে বাধ্য করে সেটি পরিষ্কার হলো না!

তবে যে চমৎকার একটি দৃশ্যের কথা বলা আছে বইটিতে সেটি দেখতে আমারও ইচ্ছে করছে। কোন এক শীতের পরিষ্কার জোছনা রাতে হাজার হাজার পাখি যদি আকাশে এমন করে উড়ে যায় যে সেই পাখির গায়ে পড়ার কারণে জোছনা মাটি ছুঁতে পারছে না! জোছনার ছায়ায়  চারদিক অন্ধকার! জোছনা মেখে মেখে পাখিগুলো উড়ে চলছে... কী অদ্ভুত, অলৌকিক সুন্দর দৃশ্য!

১৮/০৮/২০১৯

Saturday, August 17, 2019

সাম্মি: উট আর উটপাখি

আজ সে উট আর উটপাখির দুটো ছবি পাশাপাশি এনেছে তার বই থেকে, এবার সে মিলাতে পারছে না।
উট আবার পাখি কেমন করে হয়!?

আবার বাবা বলেছি "উট পাখি কিন্তু একটা পাখি যে উড়তে পারে না!"

একেবারে তালগোল পেকে গেল!😘

১৭/০৮/২০১৯

Thursday, August 15, 2019

বই পর্যালোচনা: লিপি - হুমায়ূন আহমেদ

প্রথমে নাম দেখে মনে হয়েছে:
"হুমায়ূন আহমেদ তো তার গল্পের নায়িকাদের নাম এমন রাখেন না"!
পরে বুঝতে পারলাম প্রচ্ছদ দেখে। এখানে অন্য লিপির কথা বলা হচ্ছে।

ছোট একটি গল্প। হুমায়ূন আহমেদ যখন নর্থ ডাকোটায় থাকতেন তখনকার একটি কথা। ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকের ঘটনা; যখন তিনি পিএইচডি করছেন এবং থিসিসের কাজে তুমুল ব্যস্ত। এরিখ থমসন নামের একজনের চিঠির সূত্রে তার উদ্ধার করতে চাওয়া এক লিপি বা চিঠি যেটি কিনা তার "অপূর্ব রূপবতী" ও অসাধারণ মেধাবী স্ত্রী কারোলিনা তার জন্য লিখে গেছেন। গেছেন মানে মারা গেছেন।এরপরের গল্প চমৎকার...

১৫/০৮/২০১৯

Wednesday, August 14, 2019

বই পর্যালোচনা: মামলার সাক্ষী ময়না পাখি - শাহাদুজ্জামান

শাহাদুজ্জামানের সাম্প্রতিকতম বই বোধকরি এটিই। তার প্রথম যে বইটি আমি পড়ি সেটি হচ্ছে সবচে আলোচিত "ক্রাচের কর্নেল"। বইটি পড়তে গিয়ে প্রথমেই যে বিষয়টি মনে হয়েছিল সেটি হচ্ছে তার উপমার ব্যাবহার, একটি আলাদা, উদাস করা, অন্য ধরণের বাক্য ছুড়ে দেয়া। এমন বাক্য খুব বেশি হয়না কিন্তু যে কয়টি হয় সেগুলো পাঠককে ভাবায়।

ক্রাচের কর্নেলের সাথে একটি তুলনা করতে চাইছি এই কারণে যে সেই বইটি যতটা সুখপাঠ্য ছিল এই বইটি ততটা নয়। সেই বইটি পড়েই যেমন মনে হয়েছিলো "এই লেখকের সবগুলো বই পড়ে ফেলতে হবে"! কিন্তু এই বইটি পড়ে তার "কয়েকটি বিহ্বল গল্প" এর মতই লাগছে। ঠিক সুখপাঠ্য নয়, সবশ্রেণীর পাঠক এটি পড়বেন না। অবশ্য এই বইয়ের প্রথম গল্পের মত হয়তো আমি "নকল পাঠক", যে কিনা পরিচিত রাস্তা খোঁজে, অপরিচিত রাস্তা বাঁক খুব একটা দেখতে চায়না!

তবে এই যে প্রথম গল্পটি (জনৈক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যিনি গল্প লেখেন") যেমন করে লেখা "কয়েকটি বিহ্বল গল্প" এর প্রথম গল্পও যতদূর মনে পড়ে এমন বিষয়েই লেখা: লেখকের গল্প বুননের যুদ্ধ। (লেখক নিজে প্রতিনিয়ত নতুন করে নতুন গল্প বুননের ক্লান্তিকর চেষ্টা করে চলেছেন বলেই মনে হয়!)

এখানে প্রথমটিসহ মোট ১১ টি গল্প রয়েছে। এখানে আরও একটি পর্যালোচনায় আসা যায় যেমন: লেখক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় যতটা পারদর্শী ততটা ঠিক "সহজ ভাষায় গল্প বলা"য় নয়। যেটিকে আমার সবচে দুর্লভ মনে হয়। তার ক্রাচের কর্নেল ও একজন কমলালেবু যতটা পড়তে ভালো লেগেছে অন্যগুলো তেমন নয়। তার প্রথমদিককার বই "একজন নৃবিজ্ঞানী ও কয়েকটি হাড়" বইটিও টেনে নিয়ে যাওয়া পাঠক হিসেবে আমার জন্য কষ্টের ছিল; যদিও আমি নিজেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র!

তবে, লেখকের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুন্দর এবং "ভাবনা উদ্রেককারী" যুতসই একটি নামকরণ! এইখানে তিনি শতভাগ সফল। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও সেটি সত্যি। একটি গল্পের নিতান্তই সাদামাটা ঘটনা থেকে উঠে এসেছে এই নাম "মামলার সাক্ষী ময়না পাখি"! তবে, চিত্তাকর্ষক! ( বইয়ের চাইতে বইয়ের লেখকের আলোচনা হয়ে উঠেছে বেশী! যদিও লেখক কে আমরা চিনি তার সৃষ্টির মাধ্যমেই। তো retrograde study করা যেতেই পারে!)

যদিও প্রতিটি গল্প স্বতন্ত্র ও সুন্দর তবে আগেই বলেছি গল্পগুলোর পাঠক শ্রেণী নির্দিষ্ট। সকল পাঠক এটি সমানভাবে নেবেন না। কিছুটা বিদেশি লেখকের গল্পের মত মনে হচ্ছিল; যেখানে ঘটনার আবহ দিয়ে ঘটনা বোঝানোর চাইতে সরাসরি গভীর বর্ণনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা আছে।

আমার নিজের বেশি পছন্দ হয়েছে "টুকরো রোদের মত খাম" গল্পটি। বেশ চিত্তাকর্ষক।

এছাড়া বাকিগুলোকে যদি এক লাইনে বলি:
- মৃত্যু সম্পর্কে আমার ধারণা খুব পরিষ্কার : চমৎকার, নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায়
- চিন্তাশীল প্রবীণ বানর : নামটা! গল্প সাদামাটা (এছাড়া একটা ভুল মনে হয় আছে! এই গল্পে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তখন সবাই রেডিও শোনে, টিভি আসেনি এমন একটা সময়। তখন এই দেশে "ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়ন" ছিল কি?)
- পৃথিবীতে হয়ত বৃহস্পতিবার : বেশ আধুনিক সময়ের যাতনার গল্প।
- উবার : কেন গল্পের নাম উবার? শেষ দৃশ্যের মানে কি? (আমি হয়ত বুঝিনি)
- অপসৃয়মান তির : তির বানানটি শিখলাম। ভালো সাধারণ গল্প।
- ওয়ান ওয়ে টিকেট : ভালো গল্প, কিছু নিজস্ব সুন্দর ভাবনার কথা আছে।
- লবঙ্গের বঙ্গ ফেলে : চিরায়ত গল্প, বৈচিত্রের কিছু নেই।
- মামলার সাক্ষী ময়না পাখি: এই গল্পটিও জানা গল্পের মতই লেগেছে যদিও ময়না পাখির রূপক অর্থ গল্পকে আলাদা অর্থ দিয়েছে।
- নাজুক মানুষের সংলাপ: গভীর, ভাবনার খোরাক আছে, বেশ গভীর বোধ থেকে লেখা কিন্তু বইয়ের শেষ গল্প হিসেব অন্য কিছু চাইতাম।

এইবেলা রাখি। ধন্যবাদ।

১৪/০৮/২০১৯

Friday, August 9, 2019

বই পর্যালোচনা: মাতাল হওয়া - হুমায়ূন আহমেদ

মাতাল হওয়া বইটা আগে পড়া হয়নাই। এতদিন পর পড়লাম এমন একটা সুন্দর বই! মন খারাপ লাগছে!

বইটাতে হুমায়ূন আহমেদ তার নিজের ছাত্রজীবনের গল্প বলার পাশাপাশি মিলিয়ে আরো একটি গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। সেই গল্পের নায়িকা নাদিয়া, দিয়া বা তোজল্লি!
এই নাদিয়া তার কাছে চিঠি লেখা সত্যিকারের শ্যামলা, ছিপছিপে, ঢাকা ভার্সিটি পড়ুয়া নাদিয়া হতে পারে আবার নাও হতে পারে! গল্পকার মাত্রই গল্প লেখেন, সত্য বয়ান  পাঠক পড়ে না!

এই বইতে হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য বইয়ের মত নায়িকাকে একবারও "অপূর্ব রূপবতী" বলা হয়নি বরং নায়ককে "গ্রীক দেবতাদের মত", "এমন সুন্দর পুরুষ দেখিনাই", "অপূর্ব রূপবান" ইত্যাদি বিশেষণ দেয়া হয়েছে একাধিকবার। গল্প যার নাম "রাজা চৌধুরী"।

গল্পের প্রধান চরিত্র হিসেবে বলা যায় দুদে উকিল, মোনায়েম খাঁর ছোট ভাই ময়মনসিংহবাসী হাবিব সাহেব, যার ডাক নাম "হাবু"। তবে এই ডাকনাম পড়ে তাকে মোটেই জেনতেন ভাববার কোন কারণ নাই। যেকোন কেইসকে নিজের পক্ষে নেবার ক্ষমতা তার আছে, তিনি চাইলে খুনের আসামীকেও ছাড়িয়ে আনতে পারেন, একজনের খুনের দায়ে অন্যকে সাজার ব্যাবস্থা করতে পারেন, পুলিশ আদালত তার হাতের তালুতে। শুধু তার মায়ের কাছে তিনি হাবু!

হাবিব সাহেবের মা, হাজেরা। যিনি সারাক্ষনই তার ঘরে থাকেন এবং সবাইকে তার ইচ্ছামত হুকুম করেন। তার নিজের একটা আলাদা জগৎ আছে, নিজের চিন্তার জগতে তিনি স্বতন্ত্র। অসম্ভব বুদ্ধিমান একজন নারী। তবে তার ছেলে হাবিবের সাথে তার একটা চারত্রিক দ্বিমুখীতা আছে যদিও হাবিব নিজে যতই ধূর্ত হোক, যতই নিয়মের বাইরে যাক মায়ের প্রতি তার আচরণ কখনোও বিরূপ নয়। যদিও হাজেরা বিবি তার এই আচরণের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন গল্পের এক পর্যায়ে।

গল্পের নায়ক বিশাল জলমহালের অধিকর্তা পুত্র রাজা চৌধুরি, হাসান রাজা চৌধুরি। যে এখানে খুনের দায়ে পালিয়ে বেড়ানো আসামী আর হাবিবের সাহেবের মক্কেল! যদিও খুব বিকশিত নয় কিন্তু হাসান রাজা চৌধুরি এখানে চরিত্রবান পুরুষের ছবি।

গল্পের শুরুতে ফারুক চরিত্রের একটি সম্ভবনা দেখা দিচ্ছিল। যথেষ্ট সম্ভাবনাময় চরিত্র হলেও সে মূলধারায় আসেনি।

আরো কিছু চরিত্র আছে হাবিবের সহযোগী প্রণব বাবু, পাংখাপুলার রশিদ, নাদিয়ার শিক্ষক বিদ্যুৎ কান্তি দে (যদিও এই চরিত্রের একটি পরিণতি আছে কিন্তু বিকশিত হবার আরো সুযোগ ছিল! মানে, মনে মনে খুব চাইছিলাম)

গল্পের সাথে সাথে হুমায়ুন তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে নিয়ে বলেছেন, সে সময়ের রাজনৈতিক পট নিয়ে কিছু কথা বলেছেন, মওলানা ভাষাণী আর শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থানের কথা আছে। যদিও এগুলোর চাইতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাটাই বেশী আলোকিত হয়েছে। খোকা, পাচপাত্তুর এর সাথে তার হাত দেখা, ম্যাজিক দেখানো, প্লানচেট, সম্মোহনবিদ্যা, আনিস সাবেতের সাথে প্রথম মিছিলে যাওয়া এগুলোই বেশী উঠে এসেছে।

আরো গুরুত্বপূর্ণ  হচ্ছে হিমুর "রুপা" চরিত্র সৃষ্টির কথা। বন্ধুর হয়ে তার প্রেয়সীর জন্য প্রেমপত্র লিখে দেয়া, যেগুলোকে নিজে নিজেই তার প্রথম সাহিত্যকর্ম বলে স্বীকার করেছেন। লিখতে লিখতে রুপার ছবিও দেখা হয়ে যায়। হয়ত রুপার জন্য লিখতে লিখতে মিষ্টি রুপার জন্য হুমায়ুনের মনে একটা জায়গা তৈরী হয়েছিল। তাই রুপাকে হারিয়ে দিতে যেতে চাননি, অমর করে রেখেছেন তার গল্পের হিমুর সাথে।

গল্পের শেষের দিকে হাসান রাজা চৌধুরির মত একজন আদর্শ চরিত্রের যুবক কেন খুন করতে গেল তার রহস্য যেমন উন্মোচিত হয়েছে তেমনি একেবারে শেষে চূড়ান্ত বিয়োগান্তক সমাপ্তির মাধ্যমে নাদিয়া ও রাজা চৌধুরি চরিত্রদুটিও পরিণত হয়েছে।

পাঠককে ভাবাবার মত একটা সমাপ্তি আছে। একটা হাহাকার আছে, আবার অনেক উত্তর না জানা প্রশ্নও আছে।

সবমিলে চমৎকার একটা বই।

২৭/০৭/২০১৯

Monday, July 29, 2019

মেয়ের কি বুদ্ধি!!!

আজ একটু আগে আমার মেয়ের বুদ্ধি দেখে আমি যারপরনাই বিস্মিত! আমার চোখে পানি চলে আসছে!

প্রতিদিনের মত আজকে রাতেও সে "একটা গল্প বল"!

আমি গতকাল তাকে কোন একটা গল্প বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। ভাবলাম আজ সেটা বলি, শেষ করি। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না ঠিক কোন গল্পটা বলেছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল পিরামিডের গল্প! কিন্তু এইরকম কোন গল্প আমার নিজেরই মাথায় আসছে না!

মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম: মা! কাল তাহলে তোমাকে কি গল্প বলেছিলাম আমাকে মনে করিয়ে দাও!

(সে এগুলো পারে! তার স্মরণশক্তি প্রখর! গতকাল তার মা'র odomos আনার কথা ছিল। পায়নি, বলে আমাকে বলছিল: সাম্মির জন্য আনতে চেয়েছিলম কিন্তু  পেলাম না!

সাম্মি তো আর জানেনা odomos কি বস্তু! ভেবেছে নিশ্চই তার জন্য দারুন কিছু! সে সেটা মনে রেখেছে! গতাকাল বলেনি! আজ মা আসতেই মাকে বলছে:  "কাল যেন সাম্মির জন্য কি আনতে চাইলে আনতে পারলে না? সেটা কি আজ এনেছ?)!!!

তো সাম্মি বললো:
- তুমি আমাকে কাঠুরের গল্প বলছিলে।

হবে হয়তো! আমি কাঠুরের গল্প এতবার বলছি! প্রতিবারই নতুন কিছু মশলা যোগ হচ্ছে! কিন্তু সে আজকে বলল সে কাঠুরের গল্প শুনবে না। সে অন্য কোন গল্প শুনতে চায়।

আমার মাথায় আসলো, একটা কাকের গল্প! যে পানি খেতে গিয়ে না পেরে বুদ্ধি করে পাত্রের ভেতর ছোট ছোট পাথর ফেলে পানি খেয়েছিল।

তো আমি সেই গল্পই বলছিলাম। একটি খুব সুন্দর কাল কাক ছিল! বুঝাচ্ছিলাম একটা জগের মতো পাত্র ছিল। সেখানে পানি খেতে পারছিলনা কাকটা। পাত্রে পানি কিন্তু ছিল কিন্তু পানি পর্যন্ত কাকের ঠোট যাচ্ছিল না। আবার জগটা ফেলে দিয়ে পানি খাওয়াও যাচ্ছিল না। যগটা শক্তভাবে মাটিতে ছিল। কাকটা কিছুতেই পানি খেতে পারছিল না। কিন্তু ওর খুব পানি পিপাসা পেয়েছিল।

শেষে বললাম:
- বলতো মা! কাকটা এখন কিভাবে পানি খাবে!? তুমি কাকটাকে একটা বুদ্ধি দাওতো!

সে আমাকে বলল:
- তাহলে আর তিনটা কাককে ডেকে নিয়ে আসবে। আর তিনজনে মিলে ঐ পাত্রটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে পানি খাবে!

চমৎকার বুদ্ধি!! এইগুলোই সারাদিন করে তো সে! এইতাই তার সহজাত বুদ্ধি হবার কথা!

আমি বললাম:
- নাহ! আর কোন পাখি নাই। ও ওর কোন বন্ধু কাককেও দেখতে পাচ্ছিল না, আর কোন অন্য পাখিকেও না।

তখন স্বামী বললো:
- তাহলে দুটো পাখি আসবে!

আমি বললাম:
- না, আর কোন পাখি আসতে পারবে না। ঐ কাকটাকে একাই একটা কিছু করতে হবে!

তো যখন সাম্মি আর কোন বুদ্ধি দিতে পারছে না তখন আমি বললাম:
- তাহলে আমি বলি! ও বুদ্ধি করলো- বড় একটা পাথর ফেলবে ঐ পাত্রে। তারপর নিচু হয়ে যাবে তখন পানি ওপরে চলে আসবে। আর ও সেটা খাবে!
তুমি দেখেছো না, তোমার মগে পানি একদম বেশী নিলে, মগের ভেতর একটা চামচ বা কিছু পড়লে তখন পানি মগ থেকে পড়ে যায়!

কি বুঝল কে জানে। বলল:
- হু!
- কিন্তু বড় পাথর তো ও আনতে পারছে না। ও তো একটা পাখি। ওত বড় একটা পাথর ও কেমন করে আনবে!? তাহলে এখন কি করবে? এত কষ্ট করে ও পানি খাবেনা? কিন্তু ও ভাবল ওকে কিছু একটা করতেই হবে। আরো ভাবতে হবে। এরপর ও চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো। কি করা যায়.. পানি খেতেই হবে... এখন তুমি ওকে একটা বুদ্ধি দাও তো মা ও কি করবে।

মেয়ে তখন সাথে সাথে বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছে!
তা হল:
- তাহলে ও ছোট ছোট, নরম(!) পাথর নিয়ে আসবে। নরম পাথর পানিতে ফেলবে আর তখন পানি ছুক করে ছিটে আসবে আর তখন সেটা খাবে!

(কী বুদ্ধি! কী বুদ্ধি!!)

- তারপর দুটো তিনটে পাথর দেবে আর সব পানি খেয়ে ফেলবে!

কী দারুণ বুদ্ধি!!!

এমন বুদ্ধি তো আমার মাথতেও আসত না!

সুবহানাল্লাহ!

২৯/০৭/২০১৯
রাত ১.৩০