বইটি অনেক আগের। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত। আগে পড়েছিলাম তবুও আবার পড়ে ভালো লাগলো। তবে "আগে পড়েছিলাম" এটুকু বুঝতে আমাকে শেষদিকে বুড্ডার সাগরেদ ছোটনের এর বদ অভ্যাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে!(কিশোর মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মাঝে শুধু ঐটুকুই মাথায় রেখে দিয়েছে)।
হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো খুব দ্রুত পড়ে ফেলা যায়, এটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
মূল কাহিনী বেশ ছোট। একটি পরিবার দূরে বেড়াতে যাওয়ার সময় আরিচা ফেরি ঘাটের কিছু আগে রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া দুটি শিশুর মৃতদেহ নিয়ে বাইরে থেকে আসা একটি গ্রুপ ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। যেমনটা আসলে হরহামেশাই হচ্ছে এদেশে। তবে ঘটনার সময়কাল এখন থেকে বেশ আগের। তখনকার বাস্তবতা বইটি পড়লে বেশ বোঝা যায়।
এটি একটি রুঢ় বাস্তব গল্প কিন্তু এই গল্প বুনন করতে গিয়ে ছোট ছোট চরিত্র এসেছে, দুঃখগাথা, প্রেম, সাহস, মায়া এগুলো এসেছে।
চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে এখানে একটি চরিত্র মীরা বা জোছনা; যে কিনা সশরীরে উপস্থিত না থেকেও পুরো গল্পটির বড় স্থান দখল করে আছে! যাদের কাছে আসলে মানুষ বদলে যায় মীরা ছিল তেমন একজন। মীরা জহিরের স্ত্রী, যে বিয়ের কিছুদিন পরেই কোন কারণে মারা যায়। শুধু পেছনে ফেলে যায় জহির, জহির এর বন্ধু মনজুর, মনজুরের স্ত্রী রেবেকা এবং তাদের কিছু সম্পর্কের টানাপোড়েন। যদিও শেষ দৃশ্যে এসে সব মিটে যায়। বড় বিপর্যয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজেদের গড়ে তোলা ছোট ছোট সমস্যা কাটিয়ে ওঠে।
নিতু এখানে মনজুর দম্পতির একমাত্র আঠারো বছর বয়সী কন্যা। যদিও সে গল্পের নিয়ামক মাত্র এবং এখানে "অপূর্ব রূপবতী"ও নয়! তবে গল্পের প্রথমে কেন রেবেকা মেয়েকে খারাপ দেখাচ্ছে জেনেও সবুজ শাড়ী পড়তে না দিয়ে কমলা শাড়ি পরতে বাধ্য করে সেটি পরিষ্কার হলো না!
তবে যে চমৎকার একটি দৃশ্যের কথা বলা আছে বইটিতে সেটি দেখতে আমারও ইচ্ছে করছে। কোন এক শীতের পরিষ্কার জোছনা রাতে হাজার হাজার পাখি যদি আকাশে এমন করে উড়ে যায় যে সেই পাখির গায়ে পড়ার কারণে জোছনা মাটি ছুঁতে পারছে না! জোছনার ছায়ায় চারদিক অন্ধকার! জোছনা মেখে মেখে পাখিগুলো উড়ে চলছে... কী অদ্ভুত, অলৌকিক সুন্দর দৃশ্য!
১৮/০৮/২০১৯
No comments:
Post a Comment