Friday, December 14, 2018

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পুরো ৯ মাস প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার পর তারা পরাজয় নিশ্চিত জেনে স্বাধীনতার মাত্র দুইদিন আগে থেকেই শুরু করে ঠান্ডা মাথায় জাতিকে পঙ্গু করে দেবার পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ দেশের সবচে মেধাবী, সবচে পরিশীলিত মানুষগুলোকে সুনির্দিষ্ট তালিকা করে হত্যা! এদেশের আলোবাতাস-নদী-জলেই বেড়ে ওঠা কিছু পাকিস্তানের দোসর আলবদর, মাত্র একদিনে দেশটাকে পিছিয়ে দিল "অগণিত সময়ের জন্য"! অগণিত সময় বলছি কারণ ব্যাপারটা "বাটারফ্লাই এফেক্টে"র মত; যেখানে সামান্য প্রজাপতির ডানার বাতাসে কালের আবর্তনে বনভূমির সৃষ্টি হয় সেখানে অসামান্য সেই সোনার মানুষগুলো বেঁচে থাকলে আমাদের দেশটা আরো কতই না সুন্দর হত!

হয়ত সেই সোনার মানুষগুলো থাকলে সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দেশের দায়িত্বটুকু নিতে পারতেন, এখন সংখ্যাটা (হাজার) আপাত কম মনে হলেও আসলে ওরাই ছিলেন পুরো বাংলাদেশ! পুরো দেশে শহিদুল্লাহ কায়সার, জ্যোতির্ময় গুঠাকুরতা, সেলিনা হোসেন, আবদুল আলীম চৌধুরী, মুনির চৌধুরী, আলতাফ মাহমুদ কয়জন ছিলেন!? ধ্বংসস্তূপ থেকে একটা দেশকে তুলে আনতে যাদের প্রয়োজন ছিল সবচে বেশী সেই মানুষগুলো স্বাধীন দেশে নেই! তারা নেই মানে তাদের সমগ্র জীবনের সাধনা দিয়ে যে জ্ঞান, যে প্রজ্ঞা তারা অর্জন করেছিলেন তার কিছুই আর স্বাধীন দেশটা পেলনা! এ যে কত বড় হাহাকার! কত অসীম না পাওয়া!!

আমার কেন যেন মনে হয়, এই যে কত ঝড় সইতে হল এগুলো পেছনেও ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ দায়ী!!!

এই যে আমরা স্বাধীনতাটা পেলাম, কিন্তু আমাদের নিজেদের সঠিক মুক্তি আসল না। আমাদের দেশের সবচে সুন্দর চিন্তা করার মানুষগুলোকে হত্যা করা হল আর যারা হত্যা করল তারা দেশের মাটিতে বেঁচে রইল, শুধু বেঁচেই রইল না; দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা পেতে লাগলো! এক সময় দেশেকে শাসন করতে লাগলো! আমরা ঠিক রুচিবোধ তৈরি করতে পারলাম না, আমাদের শিল্প সাহিত্য কোথায় যেন আটকে গেল, আমাদের নিজেদের মাঝে নানা দ্বন্দ্ব তৈরি করা হল, আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ দেখলাম; নিজেদের অনন্তকালের জন্য কলঙ্কিত করলাম, ৭৫ পরবর্তী আমাদের দেশটা কত সম্ভবনা থেকে বঞ্চিত হল, দেশের শিশুরা তার দেশের ভুল ইতিহাস জেনে বড় হতে লাগলো, যে শিক্ষা তাদের পাবার কথা ছিল সেই চমৎকার শিক্ষাটা তারা পেলনা, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের পতাকা দেখলাম, একটা প্রজন্ম দেশের প্রতি ভালোবাসার বদলে এক ধরনের তাচ্ছিল্য নিয়ে বেড়ে উঠল... এই এতগুলো ব্যাপারের একটা বড় নিয়ামক হচ্ছে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১! (অন্তত আমার তাই মনে হয়)

আমরা আজও একটা যুদ্ধ করে যাচ্ছি! এত বছর পরেও আজ সেই ঘাতকেরা দেশকে শাসন করতে চায়! স্বাধীনতা আমাদের আসল কোথায়!?

কী আস্পর্ধা!

আর আমরা আজও সেই প্রতিবাদ দেখিনা, আজও বুদ্ধিজীবীর নামে বুদ্ধিবেশ্বাদের কদর্য কথা আমাদের শুনতে হয়!

আফসোস! খুব আফসোস!!

বাংলাদেশ এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই দেশ সামনে চলবে কার হাত ধরে, দেশটিতে কি আদৌ মুক্তিযুদ্ধ বা দেশপ্রেমের চর্চা স্থায়ী হবে কিনা এসব প্রশ্নের খুব পরিস্কার জবাব দরকার। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যেতে চায়না, বাংলদেশ সোনার বাংলা হতে চায়। দেশের মানুষগুলোকে সেই সুন্দরতম রুচি, শিক্ষা ও জীবনবোধ অর্জনের জন্য আরো একটু সময় দরকার, এই পরিবেশ আরো একটু প্রলম্বিত হওয়া দরকার। তবেই সামনে আমরা পাব পরিচ্ছন্ন, সুন্দরতম এক অদম্য বাংলাদেশ!

জয় বাংলা!

Wednesday, October 17, 2018

বুক রিভিউঃ যদ্যপি আমার গুরু - আহমেদ ছফা

বইয়ের শুরুতে যেভাবে দুলাইন লেখা:
"যদ্যপি আমার গুরু শুড়ি বাড়ি যায়,
তথাপি তাহার নাম নিত্যানন্দ রায়!"
তাতে মনে হয়েছিলো বুঝি বেশ রসের দেখা পাওয়া যাবে বইটিতে। কিন্তু অবস্থা মোটেই তা না, বেশ সিরিয়াস টাইপ লেখা যার বিষয়বস্তু প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক; লেখকের শিক্ষক, যাকে তিনি "গুরু" মেনেছেন।

যদিও সত্য কথন হচ্ছে আমি ওনার নামই এর আগে শুনিনাই!(অবশ্য আহমদ ছফাও তার সময়ে তার নিজের প্রয়োজনের আগে প্রফেসর রাজ্জাককে চিনতেন না!) তবে পুরো বই পড়ে কিন্তু আমার প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি একটা আলাদা শ্রদ্ধা তৈরি  হয়েছে।

খুব ঋজু চরিত্রের অধিকারী, স্পষ্টভাষী, বিলাসহীন ও প্রচারবিমুখ, আজীবন অকৃতদার এবং সবাইকে উপেক্ষা করে নিজের মতে অবিচল থাকার মত দৃঢ় এই মানুষটির নেশা বলতে হুক্কা, আর সত্যিকারের নেশা হচ্ছে বই পড়া! ক্লাস নিতে তাকে খুব বেশি আগ্রহী মনে হয়নি কিন্তু পড়াশোনায় তার আগ্রহ অসীম। তার পান্ডিত্য সবাইকে চুম্বকের মত আকর্ষন করত। অনেকেই ঈর্ষা-কাতর হতেন তার জ্ঞানের জন্য। শুধু তার সময়ের না, যে কোন সময়ের জন্যেই হয়ত তিনি অনন্য বিদ্বান একজন মানুষ। এমনকি শেষদিকে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে জ্বরাগ্রস্ত হলেও তাকে দেখা গেছে ঝুঁকে বইয়ের পাতায় ডুবে যেতে।

লেখকের সাথে তার দেখা বা পরিচয় হয় মাষ্টার্সের আগেই পিএইচডি স্কলারশীপের থিসিসের সুপারভাইজার খোজার সুবাদে। বাংলা সাহিত্যের ওপর করা এই থিসিস যদিও শেষতক আলোর মুখ দেখেনি (কাকতালীয়ভাবে তার সুপারভাইজার প্রফেসর রাজ্জাকের থিসিসটিও কখনও আলোর মুখ দেখেনি!)। স্বাধীনতার আগে শুরু করা পিএইচডি ডিগ্রিটাও তার নেয়া হয়নি কিন্তু পরিচয়টা রয়ে গেছে, বাহাত্তর থেকে চুরাশি; তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডালপালা মেলেছে; অবলীলায় ঢাকাইয়া বুলি আওড়ানো প্রফেসর রাজ্জার ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছেন আহমেদ ছফা'র গুরুতে। (আহমদ ছফার মত বিদগ্ধজনের গুরুর আসন নেয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়! যেখানে আধুনিক যুগের অনেক প্রতিথযশা লোকের কাছেই ছফা একজন আদর্শ!)

বইয়ের প্রথম যে কথায় আমার টনক "বড়সড় আকারে" নড়ে সেইটা হচ্ছে, প্রফেসর রাজ্জাকের মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও জ্ঞান তৈরিতে উল্ল্যেখ্য তেমন অবদান নেই! প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত তৈরী, ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই তিনটি বড় অবদান ছাড়া আর বলবার মত কিছু নেই! যদিও এই তিনটিই পুরো জাতিকে পথ দেখিয়েছে তবুও জ্ঞানচর্চা ও বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তেমন ভূমিকা রাখেনি। জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কোন গবেষণা করার চেষ্টা করেন নি; শুধু মিলাদ আর বিয়ে পড়ানোয় সময় পার করেছেন; ইংলন্ডের ডিক উইলসন, ফ্রান্সের ক্লদ লেভি লস-সহ দেশী অংকের রমজান আলী(যার বিশ্বখ্যাত গণিতবিদ হবার সকল সম্ভবনা ছিল); অনেক বিখ্যাত জ্ঞানীগুনীজন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনা করেছেন কিন্তু তারাও একে শিক্ষায় "আদর্শ" কর‍তে পারেন নি। "প্রাচ্যের অক্সফোর্ড" সর্ববেই একটি "অতিশয় রঞ্জিত" কথা! (ভাববার বিষয়!!)

কোন  একটা জায়গাকে চেনার উপায় হচ্ছে সেখানকার বাজার আর বইয়ের দোকানে যাওয়া! সেখানকার মানুষ কি খায় আর কি পড়ে তা দিয়েই তাদের যাচাই করা যায়। পুরোন ঢাকার মানুষ হিসেবে ছিলেন ভোজনরসিক(তবে তার লেখায় বাকরখানির কথা থাকলেও বিন্দুমাত্র কাচ্চির কথা নেই!) এবং যে দেশে যেতেন সেখানকার অন্তত একটা রান্না শিখে আসতেন।

প্রফেসর রাজ্জাকের শিল্পকলা বোধও খুব তীক্ষ্ণ! তিনি বলেন শিল্পাচার্য জয়নুলের মত স্পেসের ব্যবহার আর কোন শিল্পী এত নিখুঁতভাবে করতে পারেনি; দুজন পালকি বাহকের মাঝে যে সুন্দর দূরত্ব থাকার কথা সেটাও তার ছবিতে আছে! ছবিতে খালি যায়গা রাখাও যে একটা মুন্সিয়ানা সেটা জয়নুল দেখিয়েছেন। এসব থেকেই বোঝা যায় প্রফসর সাহেবের বোধের জায়গাটা কত গভীর। পরে আহমদ ছফার চেষ্টায় এস এম সুলতান প্রফেসর রাজ্জাকের নজরে আসেন পক্ষান্তরে দেশবাসী এস এম সুলতানকে আবিষ্কার করে। যদিও এখানে লেখকের ভূমিকার কথা লেখক সন্তর্পনে এড়িয়ে গেলেও সচেতন পাঠকমাত্রই বুঝবেন এই গুণী শিল্পী হয়ত সময়ের স্রোতে হারিয়ে যেতেন লেখকের চেষ্টাটুকু না থাকলে। গানের বেলাতেও তার নজরুল প্রীতি লক্ষ্য করবার মত। শিল্পী আব্দুল করিমকে তিনি অনন্য সুরের আধিকারী বলেছেন। সামান্য মৃৎশিল্পীর মাঝে তিনি ভাষ্করকে আবিষ্কার করেছিলেন।

তার অবসর কাটত একমাত্র দাবা খেলায়। বাংলাদেশের প্রথম গ্রান্ড মাষ্টার দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদকেও প্রশিক্ষণ ও পারিবারিক সাহায্য দিয়েছেন এই প্রফেসর।

তার পরিচয়ের বলয়টাও ঈর্ষা করবার মত। নিজে পিএইচডি করতে গিয়েছিলেন প্রখ্যাত অর্থনিতিবিদ হ্যারল্ড লাস্কির তত্ত্বাবধানে! যার কাছে নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তাকে বিকোতে হবে বলে পিএইচডি শেষ না করেই থিসিস পেপার নিয়ে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। অবশ্য এই সূত্র ধরে কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের একটা "সহজ সূত্র" পাওয়া যায়ঃ "যা কিছু সামনে আসে গোগ্রাসে পড়তে হবে, কিছুদূর যাবার পর আপনাতেই বোঝা যাবে কোনদিকে এগুতে হবে"।

এছাড়া চমকিত হই যখন স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে খুব স্বল্প সময়ের সফরে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং বাংলাদেশ সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কিসিঞ্জারকে সাদরে অভ্যর্থনা জানানোর আয়োজন করে। সেখানে সুযোগ পান মলিন পোষাকের প্রফেসর রাজ্জাক যাকে কিসিঞ্জার নিজের স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন "সহকর্মী" হিসেবে! যদিও মাত্র দু-ঘন্টার সফরের আধ ঘন্টাই যখন রাজ্জাক সাহেব নিয়ে নেন তখন সরকারের একটু নড়ে চড়ে বসতে হয় বৈকি! এমনকি ডিক উইলসনের লেখা বই "এশিয়া আ্যওয়েকস" (যেটাকে গুনার মিরডালের নোবেল পাওয়া বই এশিয়ান ড্রামার সমকক্ষ ধরা হয়) বইয়ের উৎসর্গপত্রে লেখা "টু আব্দুর রাজ্জাক অব ঢাকা"!

ইতিহাস নিয়ে তার জ্ঞান কিছু কথাতেই স্পষ্ট হয়ঃ "আপনারা রামমোহনরে একেবারে আকাশে তুইলা ফেলাইছেন, রামমোহন বিলেতে যাবার সময় তাকে 'রাজা' টাইটেল দিলেন বাহাদুর শাহ যার নিজেরই কোন রাজত্ব আছিল না। কিন্তু রামমোহন সেইটা সারাজীবন আগলাইয়া রাখলেন!" যদিও বাংলা ভাষার গৌড়িয় ব্যকরণের কাজ করাকে রামমোহনের অনন্য কাজ হিসেবে বলেছেন তিনি। উর্দু, আরবি, ফারসি, সংস্কৃত অনেক ভাষাতেই কাজ করার সুযোগ থাকলেও বাংলাকে বেছে নেয়াই রামমোহন অনন্যতা। তবে তিনি নব্বইয়ের দশকের সত্যিকারের "বড় মানুষ" হিসেবে বলেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি বলেছেন "ইতিহাস ওনাকে স্টেটসম্যান হইবার সুযোগ দিছিল"! এখানে অবশ্য গভীর ভাবনার অবকাশ আছে, কারণ নানা কথায় পরবর্তীকালে তাকে জিন্নাহর সমর্থনে দেখা যায়। তার "পাকিস্তান" সমর্থনের পেছনে যে কারণ লেখক দেখিয়েছেন তা লেখকের নিজেরই মনঃপুত না হলেও সেখানে চিন্তার খোরাক মেলে, গভীর চিন্তার খোরাক!

এই জ্ঞানী মানুষটিকে নিয়ে খুশবন্ত সিংয়ের ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াতে প্রধান প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। যিনি পরে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডী-লিট পান।

ফজলুল হকের সাথে সাক্ষাতে একবার তিনি সরাসরিই বলেছিলেন "আপনি খুব সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য মিছা কথা কইবার পারেন"! ফজলুল হকের ওপর গবেষনার কাজেই রাজ্জাক সাহেবের কাছে এসেছিলেন মিসেস কামাল হোসেন; হামিদা। বস্তুত প্রফেসর রাজ্জাকের বাসাতেই তাদের পরিচয় ও পরবর্তিতে বিবাহ, কারণ তিনি দুজনকেই বিশেষ স্নেহ করতেন।

এভাবেই নানা মানুষ তার সহচার্যে এসেছেন, নিজেদের স্বার্থে বা প্রয়োজনে। কাউকেই তিনি ফিরিয়ে দেননি। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে লেখা বইয়ের লেখকও যখন তার কাছে বিদেশী স্কলারশীপ পাবার জন্য রিকমেন্ডেশন চায়, তিনি অবলীলায় তা করে দেন। বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই এক জ্ঞানী ও মহৎ চরিত্রের প্রফেসর রাজ্জাককে খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও নোট রাখা বা টুকে রাখার অভ্যাস না থাকায় এই বইটি যে লেখকের নিজের মতামতের মিশ্রণ না- তা বলা যায়না তথাপি একজন অসম্ভব জ্ঞানী মানুষের দেখা মেলে। যিনি নিজে কিছু লিখে জাননি বলে হয়ত তার জ্ঞানটুকু বা পরিচয়টুকু আমরা খুব একটা পাই না। কিন্তু তিনি কেন তেমন কিছুই লেখেন নি তার একটা আহমদ ছফা ব্যাখ্যা বেশ আগ্রহউদ্দীপকঃ তিনি তার সমকালীন সকলের চাইতে এতটাই বেশী জ্ঞানী ছিলেন যে তার লেখা তখনকার লোকে ঠিক নিতেই পারত না, তার লেখার গভীরতা বুঝবার মত পাঠকশ্রেণীর অভাবেই মূলত তিনি লেখেন নি!!!

এই শেষ কথাটুকুই কিন্তু তাকে আরো রহস্যময় করে তোলে!

১৪/১০/২০১৮

Saturday, September 29, 2018

বুক রিভিউ - বৃষ্টির দিন - মইনুল আহসান সাবের

কে যেন বলেছিল 'বইটা কি আছে আপনার কাছে?" আমার কাছে ছিলনা, একটা যেনতেন পিডিএফ পাওয়া গেল, সেটাতেই নাকি চলবে।

ভাবলাম এত কষ্ট করে পিডিএফ পড়বে! কী এমন বই!? পড়েই দেখি।

পড়তে বসে প্রথমে একটু আগ্রহ হচ্ছিল; সত্যি কথা বলতে একটা বৃষ্টির দিনে বইটার বইয়ের নামের জন্যেই বইটা পড়তে শুরু করা। শুরুটা ভালো লেগেছে, আনুশকা, লোপামুদ্রা,সৌম্য এদের কথা ছিল, পরে অপি, লেখা, মিন্টু, মাফি, এদের কোথাও আসলো; ভাবছিলাম একটা প্রাণোচ্ছল তরুণ প্রজন্মের কথা পাওয়া যাবে এই ভেবে এগিয়ে গেলাম। বেশ বড়সড় বই! ছোট ছাপায় ১৮৮ পাতা।

তবে মাঝে গল্পটা বুঝে ফেলায় অত রোমাঞ্চ ছিলনা তবে শেষ করে খারাপ লাগেনি। যদিও এই বইটা ঠিক "এখনকার আমার" জন্য নয়, আরো একটু তরুণ সময়ে পড়লে হয়ত বড় হাহাকারের জন্য দায় পড়ত বইটায়!

সবকিছু ঠিকঠাক চলতে থাকা দুটি তরুণ তরুণীর মাঝে প্রেম আসা, তরুণটি হঠাৎ করে ঘটনাচক্রে রাজনীতির নোংরা খেলায় জড়িয়ে পড়ে। একদিকে যেমন সে সবকিছুর প্রতিবাদ করতে চায়, আবার পথটাও ঠিক মেনে নিতে পারেনা। চুড়ান্ত কোন এক পরিণতি মেনে নিতে হয়। মাঝে আসে ছোট ছোট অনেক চরিত্র।

পুরোটাকে শুধু প্রেমের উপন্যাস বললে ভুল হবে, প্রেমের উপাখ্যান ততটা নেই যতটা আছে তখনকার বা সমসময়কার এলাকা দখল, রাজনীতি ও মাস্তানির বাস্তবতার কথা। ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের কথা।

আমি জানিনা এখনকার প্রেমের উপন্যাসে কি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার বা স্কাইপ আসে কিনা! কিন্তু এই লেখা সেই সময়ের যখন এগুলো ছিলোনা! তবুও এইখানে মইনুল আহসান সাবেরের আগের লেখাগুলোর মত লাগেনি আমার। তিনি আরও ভালো লেখেন, যদিও "যুক্তি" থাকে বেশী সেসবে কিন্তু পাঠক "আবেগ" চায় বেশি!

অপেক্ষা আর আকুতি ভরা উপন্যাসে তাই শেষে অপিদের জন্য, আনুশকাদের জন্য মন কেমন করে।

২৪/০৮/২০১৮

Saturday, September 22, 2018

সাম্মির রেলগাড়ি

সাম্মিকে নিয়ে আমরা আগেও রেলগাড়িতে চড়েছি। বগুড়া যাবার সময়। এবার যাচ্ছিলাম ময়মনসিংহ। সাম্মি কি ময়মনসিংহ আগে ট্রেনে করে গিয়েছে?

উম! যাবার তো কথা! মনে পড়ছে না কেন?

তো এইবার রেলগাড়িতে যাবার আগেই তাকে  বলে রেখেছি, রেলগাড়ি ঝিক-ঝিক, ঝিক-ঝিক করে চলে! আবার যখন রেলগাড়িতে উঠেই বলেছি
- এই যে দেখেছ মা! রেলগাড়িটা ঝিক ঝিক করে চলতে শুরু করেছে!
সে কিছু না বলে শুনছে! একটু পরেই বলে:
- কোথায় ঝিক ঝিক করে চলছে?
- এই তো শোন মা! ঝিক ঝিক... ঝিক ঝিক...
আমিও ট্রেনের শব্দটা ওকে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করি। এবং আমিও বুঝি যে রেলগাড়িতে আসলে সেই ঝিক ঝিক ছন্দ তুলে চলছে না! কি মুশকিল!
তাও মেয়েকে বলি:
- শোন মা! ভালো করে শোন!

সে কিছুক্ষণ শোনার পর আমাকে বলে:
- বাবা! রেলগাড়ি তো ঠকর-ঠকর করে চলছে!!

বিশ্বাস না হয় যারা ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেনে চলেন খেয়াল করবেন এবার থেকে!
সবগুলো ঠকর-ঠকর করেই চলছে! 😊

২২/০৯/২০১৮

Thursday, July 19, 2018

প্রিয় হুমায়ুন

হুমায়ুন চলে গেছেন আজ ৬ বছর হলো।

সময় বড় দ্রুত চলে যায়। প্রকৃতি নাকি শূন্যস্থান পছন্দ করেনা! কিন্তু বাংলা সাহিত্যে-শিল্পে কি হুমায়ূনের শূন্যস্থান পূরণ হয়েছে? আদৌ কি হবে?

বহুব্রীহি!
গল্পটা আরো আগের, নাটক হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয় আমার জন্মের বছর! সে হিসেবে আমাদের বয়স সমান!

অনেক সময়ই দেখা যায় বইটা যতটা ভালো হয়, সেটাকে নাটক বা সিনেমায় রূপ দিলে তেমন আবেদন থাকে না। কিন্তু এই নাটকের আবেদন এই অতি-আধুনিক যুগে এসেও কমেনি! দেখতে বসে ভেবেছি, আহা কি দারুণ কাজই না হয়েছিল আমাদের দেশে! কেমন পরাবাস্তব এক জগতের গল্প, যেখানে মিলি আর ডাক্তার এর সহজ সরল কিন্তু প্রানবন্ত ভালোবাসা, ফরিদ মামার মত অদ্ভুত চরিত্র, আদর্শ গৃহকর্তা সোবহান সাহেব, সবচে আকর্ষণীয় চরিত্র আনিস! আরো কত কুশীলব!

কখনো ভালোবাসা, কোথাও মমতা, আবার তীব্র হাহাকার নিয়ে এগিয়ে চলে গল্প। সংলাপ, দৃশ্যায়ন, অভিনয় সব মিলে এক অন্য জগৎ! সাথে ৩০ বছর আগের ঢাকার দেখাও মেলে (বাড়তি এ পাওয়া অমূল্য)!

আমাদের আজকের এই ব্যাস্ত জীবনের ফাঁকে এমন সুন্দর গল্প দেখার আমন্ত্রণ রইল। হুমায়ূনের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমাদের ভালোবাসা, মমতা, বৃষ্টি, জোছনা এগুলোর সাথে কোন সে লোক থেকে ভেসে আসা হাহাকারের দেখা পাইয়ে দেবার জন্য।

যেই অজানালকেই থাকুন ভালো থাকুন। আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার সৃষ্টিতেই! অনেক ভালোবাসা #প্রিয়_হুমায়ূন

১৯/০৭/২০১৮

Thursday, June 28, 2018

জার্মানির ২০১৮ বিশ্বকাপ মিশন শেষ!

ফুটবলে "নম্বর এক" দল জার্মানি এই বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে গেল! অবশ্যই এই বিশ্বকাপ তার জৌলুস হারাবে, সত্যিকারের "ক্লাসিক ফুটবল" খেলা দল জার্মানি। দারুন উপভোগ্য তাদের খেলা দেখা!

এই বিশ্বকাপে যাদের খেলা ভালো লেগেছিল তাদের মধ্যে ইরান ও মরক্কোর কেউ উঠুক চাইছিলাম। ওরা আসলেই দারুন খেলেছে, শুধু "জয়ের অভ্যাস" নেই বলে পারেনি।

সভ্য দেশ জাপান উঠেছে বলে খুশি।

ইতালি আসেইনি আর জার্মানি বাদ, দেখা যাক আর কি দেখায় "জমে ওঠা" বিশ্বকাপ!

২৮/০৬/২০১৮

Thursday, May 31, 2018

Pro levels রিক্সাওয়ালা

আজ ঢাকা মেডিকেলে আসলাম বরিশালের একজন একেবারে pro elvele রিক্সাওয়ালার রিক্সায়!

রাতে ঘুমাতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, শেষ রাতে একেবারে শেষ মুহুর্তে সেহরি করেছি। সকালে উঠেছি ঠিক সময়েই, কিন্তু বাইরে তুমুল বৃষ্টি! আকাশ কালো করে ঝম ঝম বৃষ্টি! ঘুম লাগা চোখে তাকিয়ে দেখি রাস্তায় টাখনু পানি, যার মানে হচ্ছে চৌরাস্তায় যেতে হলে আমাকে হাফ-লেগ পানি মাড়াতেই হবে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে কেমন করে বেরোই। 

এদিকে মেয়েটাও উঠে গেছে! ওর সাথে কিছুক্ষণ বৃষ্টি দেখে কখন যেন আবার কাত শুয়ে পড়েছি!

যখন উঠেছি পরে দেখি বৃষ্টি এক্টূ থেকেছে কিন্তু বেজে গেছে সাড়ে নয়! মানে আমাদের মর্নিং সেশন মিস হয়ে গেল! আমাদের ইউনিটের প্রেজেন্টেশন ছিল আজ।

বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে রাস্তায় নেমে পাচ্ছিনা কোন রিক্সা। ওরাও ছুটি নিয়েছে আজ! অন্যরাস্তা ধরে চৌরাস্তায় এসেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা! কোন বাস নাই যাবার মত, কিন্তু এক সমুদ্র মানুষ! বুঝলাম একটু বেশী ঘুমিয়ে ফেলেছি।

ভাবলাম একটা উবার মটো বা পাঠাও মটো নেই। পরে ভেবে দেখলাম এই কাদা-পানির দিনে আমার গা-পা সবই যাবে। তার উপর আবার যেকোন সময় বৃষ্টি হতে পারে! আর নাও পাওয়া যেতে পারে এই পিক টাইমে। 

রিক্সা খোঁজা শুরু করলাম। সেখানেও বিপত্তি। কেউ ডিএমসি যাবেনা! 

বলতে বলতে এক রিক্সা পেলাম, উনি ১০০ এর এক পয়সা কমে যাবেন না। তাই সই... উঠে বসলাম।

সায়েদাবাদ গিয়েই দেখি জ্যাম। রিক্সা বামে ঘুরে গেল! অনেক রাস্তা ঘুরে আবার সেই দয়াগঞ্জ মোড়ে। ভাবলাম এবার বোধহয় টুকাটুলির দিকে যাবে, কিন্তু রিক্সাওয়ালা বলে ঐদিকে জ্যাম। সে সোজা ধোলাইখালের দিকে। ধোলাইখালের ইংলিশ রোডও যখন ক্রস করে গেল তখন বুঝলাম গুলিস্তান এভয়েড করছে, পরে ঢুকল এক গলিতে নাজিরাবাজার! কিছুদুর যাবার পর সে হঠাত করে ইউ টার্ন নিচ্ছে, আমি কিছু বলার আগেই দেখি দুরে রিক্সার জ্যাম। সে এইবার ঘুরে যে কোন রাস্তায় গেল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, বোঝার সময় ছিলনা, কোথাও হাটু সমান পানি, কোথাও কোমর সমান। একবার রিক্সায় পানিই উঠে গেল, সে তবু রিক্সা টেনে চলছে আর আমি গ্যাট হয়ে বসেই আছি। পুরান ঢাকার রাস্তার যে এত "কোথাও উচু - কোথাও নীচু - বন্ধুর" অবস্থা সেটা পানি না জমলে বুঝতেই পারতাম না! মধ্যবয়সী এক লোক আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ডিএমসির দরজায়, সে তার নিজের অভিজ্ঞতায় নতুন রাস্তা ঠিকই বের করছে কিন্তু রাস্তাতো নিজেই ঠিক নেই! অবশেষে পুরান ঢাকার ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় এসে তার মুখে হতাশার শব্দ শোনা গেলঃ কেন যে এসেছিল এইদিকে! কোন ভুতে যে তাকে ধরছিল! ততক্ষণে ০১ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আর আমাকে রাউন্ডে এসে ম্যাডামও খুজে ফেলেছে! 

অবশেষে চানখারপুল দিয়ে রিক্সা বের হল এবং রাস্তার মোড়ের পানি আর সিগ্ন্যাল পার হয়ে  বার্ন ইউনিটের গেইট এ রিক্সা পৌছুল। আমি তাকে আরো কুড়ি টাকা বকশিশ দিয়ে বল্লামঃ চাচা! বাড়ি কই?

বরিশাল! 

থ্যাং ইউ! অনেক কষ্ট করছেন!

৩১.০৫.২০১৮

Thursday, April 12, 2018

হাসপাতালে প্রজাপতি নেই!

আমি একজন বাবা। আমার একটা ছোট্ট পৃথীবি আছে, বয়স ২ এর কিছু বেশী, আমরা ওকে সাম্মি ডাকি। এই বয়সেই তার রাজ্যের প্রশ্ন! বয়সটাই প্রশ্নের!
‎- বাবা! কোথাও গিয়েছিলে?
‎- বাবা তো হাসপাতালে গিয়েছিলাম মা! (ও আমি একজন চিকিৎসকও বটে)
‎- সেখানে কে থাকে?
‎- সেখানে বাবুরাও থাকে, আংকেলও থাকে, খালামনিরাও থাকে। ওরা দুত্তুমি করে ব্যথা পেয়েছে তো তাই বাবা ওদের দেখতে যাই।
‎- সেখানে বাবুরা কি করে? আর কে থাকে? সাম্মিও সেখানে যাবে?

ক্লান্ত-ব্যস্ত চিকিৎসকেরও মহানন্দের রাত আসে! রাতে পুরো পৃথীবিকে কোলে নিয়ে ঘুমানো যায়! তাকে প্রায় রাতেই গল্প শোনাতে হয়, আমাদের ও তার ক্লান্তিতে তার চোখ বুজে আসলেও "বাবা! গল্প বলো"! আমি শুর করি আর শেষটা করতে হয় তার মামকে!

তাকে গল্প বলতে হয়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি নিজেই কি আর অত গল্প জানি! তারপরেও তাকে কোলে নিয়ে রাতে গল্প শোনাই। এক আনন্দময় রঙিন দেশের গল্প! সেখানে অনেক অনেক ফুল থাকে, সবুজ ঘাসের মাঠ থাকে, বড় বড় গাছ থাকে, গাছে দোয়াল, চড়ুইয়া, বুলবুলি, টিয়া, ময়না থেকে শুরু করে ঈগল পাখিও থাকে! সেদেশের প্রায় সব গাছেই কাঠবিড়ালি থাকে, সে যে গাছই হোক তারা সেখানে পেয়ারা খায়! আর থাকে টাট্টু ঘোড়া, টবগ টবগ করে সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে চলে। সাম্মী টাট্টু ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিন্তু পড়ে যায়না। টাট্টু ঘোড়ার সাথে পংখীরাজও থাকে কিন্তু পংখীরাজ টাট্টুঘোড়ার সাথে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা! কোন খেলাতেই টাট্টুঘোড়ার সাথে পারে না; না দৌড়ে; না ঝাপাঝাপিতে। সেখানে খরগোস থাকে, মিমিউ থাকে, অনেক কুকুর থাকে, পান্ডা থাকে, বাঘ থাকে, সিংহ থাকে, হাতি, জেব্রা, জিরাফও থাকে। ওরা সবাই সাম্মির সাথে খেলতে চায়! সাম্মিকে সবাই আদর করে।

ও! আর সেই সওদাগর আর ময়না পাখির কথা তো বলাই হয়নি। এটা "মোস্ট ডিমান্ডিং ওয়ান"! 'অনেক ছোটবেলা' থেকেই সে এই গল্প শুনে আসছে, 'এখন তো সাম্মী বড় হয়ে গেছে'; কিন্তু গল্পের আবেদন কমছে না! প্রতিদিন একই গল্প শুনতে যে কত ভালো লাগে! প্রতিরাতে নতুন একটু যোগ হতে হতে আজ ডালপালা মেলে পুরো গল্পের সংসার! সেখানে ময়না পাখির অনেক বুদ্ধি! সে সবাইকে বলে দেয় কোনটা ভালো কাজ আর কোনটা পচা কাজ; পচা কাজ করলে তো কেউ সাম্মিকে আদর করেনা আর লক্ষীসোনা চাঁদেরকণাও বলে না! (এখানে আবার ময়না পাখির কণ্ঠ দিতে হয়, সওদাগরের কণ্ঠ দিতে হয়, সবাই তো আলাদা করেই কথা বলে!) গোসল করা ছাড়া, পানি নিয়ে খেলা করা হচ্ছে এখানে সবচেয়ে পচা কাজ!

তো আমার মেয়ের রাজ্যে তো অনেক আনন্দ! এক সাম্মিময় রাজ্য। সেদিন রাতে তাকে শোনাচ্ছিলাম সওদাগরের প্রজাপতি ধরার গল্প। প্রজাপতি কেন পেয়ারা খায়না সেই ব্যাখ্যায় আসতেই -
- বাবা! তোমার হাসপাতালে কি প্রজাপতি আছে? (সকালে উঠেই বাবা-মাম সাম্মীকে রেখে হাসপাতালে চলে যায়, শুয়ে শুয়ে এটাই ভাবছিল বোধকরি!)
- ‎হাসপাতালে কি প্রজাপতি থাকে মা?
- ‎ঐ যে বাবুরা থাকে!
- ‎তাই তো! বাবুরা থাকে প্রজাপতি তো থাকারই কথা!
- ‎সেখানে কি অনেক ফুল থাকে? সেখানে প্রজাপতি খেলা করে?
- ‎হ্যা মা! সেখানে অনেক ফুল থাকে! সেখানে অনেক প্রজাপতি থাকে। ওরা উড়ে উড়ে ফুলের সাথে খেলা করে। বাবুরাও ফুলের সাথে খেলা করে।

মেয়েকে তো বলি ফুল থাকে, প্রজাপতি থাকে। আসলে তো আমি জানি সরকারি হাসপাতালে কি থাকে। প্রতিটি দিনের আলোটুকুর পুরোটা সময়, কত গোধূলী-সন্ধ্যা আর নির্ঘুম রাত কেটে যায় যে হাসপাতালে সেখানে তো কোন সবুজ গাছ নেই, কোন ফুল নেই, পাখিও নেই, প্রজাপতিও নেই।

আহা! এত রোগ-শোকে আর ক্লান্তি দুখের আধারের মাঝে একটু যদি ফুল-পাখি-প্রজাপতি থাকতো! কত দারুনই না হত! এই এক জীবনের জন্য কি খুব বেশী চাওয়া? আমাদের শিশুদের জন্য, আমাদের জন্য এই গল্পগুলো সত্যি হলেও তো পারে!

Tuesday, March 6, 2018

প্রকৃতি আমায়, কী শেখাতে চায়?

পরপর দুটো ফোন হারিয়ে ফেললাম! তাও মাত্র ২ সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে!

নতুন ফোনটা কিনলাম কত গবেষণা করে। ভালো ছবি, সনি সেন্সর এইসব দেখে। মাত্র চারদিনের মাথায় নিয়ে গেল! ঐটা নিয়ে বাইরে গেছি দুইদিন মাত্র। চাইনিজ এ্যপ, ল্যাংগুয়েজ কত ঝামেলা করে বাদ দিলাম; কন্টাক্ট গোছালাম কত্ত সময় ব্যয় করে!!

ইচ্ছা ছিল নতুন জায়গায় নতুন করে শুরু করব। ভালো করে শুরু করব, পড়াশোনাটা ফোনেই গুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করব। কীসের কি!

একেবারে বোকার হদ্দ বনে গেলাম!!!

এই বস্তুগত জিনিস হারানোতে যে এত কষ্ট লাগতে পারে! ধারণা ছিলনা!!!

০৪/০৩/২০১৮