Tuesday, July 2, 2019

প্রবাদ পুরুষ: ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়

ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় চিকিৎসা সমাজের জগতের জন্য একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি তার সময়ে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে তার জন্মদিন পহেলা জুলাই কে সারা ভারতবর্ষে চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবং তার সেই প্রভাব বিদ্যমান আজও!

কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে এল এম এস পাস করেন এবং এরপরে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে মাত্র ২৬ বছর বয়সে এম ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র 26 বছর বয়সে এমডি ডিগ্রি অর্জন প্রমাণ করে তিনি কতটা মেধাবী ছিলেন! শুধু তখনকার সময়ের নয় এখনকার সময়ে ২৬ বছর বয়স এবং এই ডিগ্রী চিকিৎসকদের জন্য ঈর্ষণীয়।

কথিত আছে যে তখনকার কলকাতার আরেক বিখ্যাত চিকিৎসক ডাক্তার নীলরতন সরকারের মেয়েকে পছন্দ হয়ে যায় বিধানচন্দ্র রায়ের। কিন্তু নীলরতন সরকার তার কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, তার মেয়ের একদিনের হাত খরচের সমান উপার্জন একমাসেও করতে পারেন না বিধান চন্দ্র রায়! এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং সিদ্ধান্ত নেন আরো ডিগ্রী অর্জনের! এবং মাত্র দু'বছরের মধ্যে লন্ডন থেকে এমআরসিপি এবং এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন! এবং এও কথিত আছে যে লন্ডনের রয়েল কলেজ তাকে বারবার ফিরিয়ে দেওয়ার সত্বেও ৩০ তম অবেদনের পর তাকে ফেলোশিপ প্রদান করে। তবে যাই হোক, তিনি ফিরে এসে কলকাতা শহরে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন।

আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে কোন একজন তরুণ চিকিৎসক মাত্র ২৯ বছর বয়সে এতগুলো ডিগ্রী নিয়ে তার চিকিৎসা শুরু করেছেন সেটি অবশ্যই সারাদেশে একটি চমকপ্রদ ঘটনা হবার কথা! সম্ভবত সেটি হয়েছিল! সাধারণ মানুষ এমনিতেই চিকিৎসকের ডিগ্রি দেখেই তাকে বিচার করেন তিনি কত বড় চিকিৎসক সুতরাং তখনকার দিনে বিলেত ফেরত বিধানচন্দ্র রায় যে সারা ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের সাড়া ফেলেছিলেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তখনকার দিনে "উত্তম কুমার ডাক্তার হয়েছেন এবং বিলেত থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন" ছবির এই দৃশ্যগুলো সম্ভবত বিধানচন্দ্র রায়ের এই ঘটনার পরবর্তী প্রভাবেই আসে।

আরো প্রচলিত আছে যে, ডা: বিধান চন্দ্র রায় রোগীর মুখ দেখেই রোগীর রোগ বুঝতে পারতেন। একজন চিকিৎসক হিসেবে এটা বলতেই পারি এমন অনেক রোগ আছে যেটি মুখ দেখেই বলে দেয়া সম্ভব, চোখ দেখেই বলে দেয়া সম্ভব, কণ্ঠস্বর শুনে ধারণা করা সম্ভব, এমনকি শুধুমাত্র হ্যান্ডশেক করে বলে দেওয়া সম্ভব! বিধানচন্দ্র রায়ের মতন একজন মেধাবী ও এত জ্ঞানী মানুষের পক্ষে সেটি সম্ভব হবে এটি স্বাভাবিক এবং সাধারন মানুষ তার এই ব্যাপারটিতেই অলৌকিক বা অতি অসাধারণ মনে করেছেন এবং তাকে প্রায় ঈশ্বরের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।

পরবর্তীতে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা পান যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং অামৃত্যু এই রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

০২/০৭/২০১৯

No comments:

Post a Comment