হুমায়ূন আহমেদের সায়েন্স ফিকশন গুলোর মাঝে অন্যতম একটি বই। হুমায়ূনের সায়েন্স ফিকশন মনে হচ্ছে সায়েন্সের সাথে মানবীয় আবেগের একটা দারুণ মিশেল। সেখানে সায়েন্স বোঝানোর তেমন তাড়া থাকেনা বরং আবেগীয় ব্যাপারগুলো যে সায়েন্সের উর্ধে তেমন একটি বার্তা থাকে।
এই গল্পটিও তেমন।
এখানে মুবিনুর রহমান (এই নামটি কিন্তু এন্য গল্পের মত না! মানে আনিস না!) একজন স্কুল শিক্ষক। তাকে ভালোবাসে তার ছাত্রী; অসম্ভব রূপবতী, ইন্দ্রানীর মত দেখতে "রূপা"। এখানে রুপাকে সাধারণ গ্রামের মেয়ে হয়েও অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলতে দেখা যায়, যদিও সে পড়াশোনা নিয়ে খুব বেশী সচেতন না কিন্তু তার চিন্তা খুব পরিষ্কার। একটি গ্রামের মেয়ের সৌন্দর্য অনেক হতেই পারে কিন্তু চিন্তা ও কথা এত সাবলীল হবে এটা বোধকরি স্বাভাবিক না! লেখকও তাই বেশ কয়েকবার অন্য চরিত্রের বয়ানে বারবার বলিয়ে ব্যাপারটা পাঠকের জন্যে গ্রহণযোগ্য করেছেন।
মুবিনুর রহমানের এখানে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক, খুব সিরিয়াস ধরনের শিক্ষক যিনি নিউটন নামের আগে স্যার না বললে শাস্তি দেন, যদিও শাস্তিটুকু সামান্যই। তিনকূলে কেউ না থাকায় তিনি নীলগঞ্জ হাই স্কুলের চাকরি পেয়ে সেখানেই থিতু হন। তার দিক কাটে ঘড়ি ধরে। থাকেন নির্জনে একটা নদীর পাড়ের ভাঙ্গা বাড়িতে, নিজেই রান্না করে খান, নিয়ম করে রুপাকে পড়ান। নেশা হচ্ছে চিন্তা করা আর তার দূরবীন দিয়ে আকাশ দেখা। তার কাছের মানুষ বলতে স্কুলের ইসলাম শিক্ষক জালালুদ্দিন এবং দপ্তরি কালিপদ। দুজনেই মুবিনকে অসম্ভব পছন্দ করেন। এভাবেই চলছিল মুবিনের আর রুপার জীবন।
গল্পের মাঝে হঠাৎই রুপার বড় ভাই রফিক তার স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে নিয়ে হাজির হন নীলগঞ্জে প্রায় তিন বছর পর। (তবে কেন তিনি এতদিন নীলগঞ্জ আসেননি ব্যাপারটি কিন্তু পরিষ্কার না!) রফিকের ইচ্ছা তার পরিচিত ছেলে তানভীরের সাথে রুপার বিয়ে দেওয়া। সেভাবেই সব এগোতে থাকে। রফিকের ছোট মেয়ের রুবাবা স্বাভাবিক হলেও বড় মেয়ে জেবা একটু "অস্বাভাবিক"! এই অস্বাভাবিকতা থেকেই গল্প নতুন দিকে মোড় নেয়।
নীলগঞ্জ হাই স্কুলের হেডমাস্টার হাফিজুল কবির তাকে ১০০ বস্তা গমের হিসাবে ফাঁসিয়ে দেন, রুপার বাবা এলাকার সবচে প্রভাবশালী ব্যক্তি আফজাল সাহেবও তার মেয়ের ভালোলাগার কথা জানতে পেরে মুবিনুরকে জেলে পুরে দেন। কিন্তু তখনই "নি"রা তাকে সাহায্য করে। জেবা একজন নি, জালালুদ্দিন সাহেব, কলিপদ সবাই নি! তবে জেবাই এখানে বেশ শক্তিশালী নি!
"নি" রা হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান। তারা মানুষের মতই কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা থাকে তাদের, তারা চাইলে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। নিজেদের আলাদা মাত্রার জগতে তারা নিজেদের মত যা কিছু সৃষ্টি করতে পারে। প্রকৃতির সন্তান বলে প্রকৃতি তাদের নিজেই রক্ষা করে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের ব্যাতিক্রম কিছু হতে পারেনা। তাই যে জরাজীর্ন ঘরকে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করে এসেছে প্রকৃতি নিজেই সেই ঘরও প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেঙে নিয়ে যায় যখন মুবিনুর রহমান প্রকৃতির নিয়ন ভাঙ্গে।
সবচে শক্তিশালী নি হবার পরেও সাধারণ মানুষ রুপার প্রতি প্রবল ভালোবাসা অনুভব করায় সে রুপাকে নতুন করে তৈরির চেষ্টা করে! কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম ভাঙ্গা যায়না। চাইলেই আলোর গতির চাইতে বেশি গতিতে যাওয়া যায়না। কারণ...
এটিই প্রকৃতির নিয়ম!
০৯/০৯/২০১৯