Sunday, December 15, 2019

বুক রিভিউ: নির্বাসন - হুমায়ূন আহমেদ

এই বইটা হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয়তমা স্ত্রী গুলতেকিনের জন্যে লিখেছিলেন এবং তাকে উৎসর্গ করেছিলেন। যদিও উৎসর্গ পত্রখানির দেখা পেলাম না!

বইটিতে জরী নামের একটি মেয়ে এবং তার চাচাতো ভাই আনিসের একটি "এ লস্ট গেম" এর বর্ণনা আছে।

অসম্ভব মায়াময় করে লেখা একটা বই। কেন যেন আমার এখন হ্ন হ্ন করে কান্না পাচ্ছে! কেন যে পাচ্ছে আমি তা নিজেও জানিনা। হয়তো আমার নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এই নাইট ডিউটি করতে এসে!

এখানে কিছু অমীমাংসিত গল্প আছে যেগুলো পাঠককে নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে হয়। আবার হুমায়ূনের অন্যান্য বইয়ের মত ছোট ছোট চরিত্রের সংখ্যাও অনেক, তাদের নিয়ে খুব বেশি কাজও করা হয়নি। তাই অনেকটুকুই অজানা থেকে যায়। অনেক বইয়ের মত এই বইটাও শেষ হয়েছে একটা বিষাদ দিয়ে। এমন গল্পের সমাপ্তি হুমায়ূনের অনেক গল্পেই আছে। খুব পরিচিত মনে হয়। কোথাও এমন পড়েছি পড়েছি মনে হয়।

কিছু চরিত্র আছে বড় চাচা; জিনি বিসমিল্লাহ্‌  খানের সানাই শোনেন; চান তার ছোট ভাতিজির বিয়েতে সকাল থেকেই সানাই বাজুক। জরীর বিয়ে; দুই বোন জরী পরীর মাঝে জরী ছোট। যদিও জরী ভালোবাসতো আনিসকে। কিন্তু যুদ্ধের পর গুলি লেগে আনিস বিছানাবন্দী হয়ে গেলে সেই হিসেব মেলে না। জরীর বিয়ে ঠিক হয় কলেজের শিক্ষকের সাথে! (এখানে এই নাম না দেয়া চরিত্র চিত্রন করতে গিয়ে হুমায়ুন আহমেদ নিজেকে বসিয়েছিলেন বলে পড়তে গিয়ে মনে হল!) যদিও  বড় চাচা জরী আনিসের কথা জানতে পেরে এই বিয়ে একবার ভেঙে  দিয়েছিলেন কিন্তু আবারো নিয়তি জরীকে এই পাত্রের সাথেই বেধে দেয়। যদিও এসবের কারণ কিছু খোলসা করে দেননি লেখক।

শেষদিকে কেনই বা জরীর মা আনিসের মাকে চিনতে চান না। "আতর বৌ" কেন এ বাড়ি ছেড়ে অন্যের হাত ধরে চলে গিয়েছিল সেসবের পরিষ্কার মীমাংসা হয়না। পাঠকের অবারিত সুযোগ আছে নিজের মত করে ভেবে নেবার।

পুরো গল্পজুড়ে একটা হাহাকার ধরে রাখার চেষ্টা ছিল। কেন জরীর ছোটবেলার "সবচেয়ে সুন্দরী' এবং বেতারে গানকরা বান্ধবী কনক উদাস হয়ে যায় তার সৌন্দর্যের প্রশংসায় তা পাঠককে ভাবায়। আনিসের হাহাকার বেদনা পাঠককে ভাবায়। জরীর চলে যাওয়া এমনকি পুরো বাড়িটার এখনা বৃদ্ধ দশার মাঝেও হাহাকার তৈরির চেষ্টা আছে।

০৪/০৯/২০১৯