Thursday, May 31, 2018

Pro levels রিক্সাওয়ালা

আজ ঢাকা মেডিকেলে আসলাম বরিশালের একজন একেবারে pro elvele রিক্সাওয়ালার রিক্সায়!

রাতে ঘুমাতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, শেষ রাতে একেবারে শেষ মুহুর্তে সেহরি করেছি। সকালে উঠেছি ঠিক সময়েই, কিন্তু বাইরে তুমুল বৃষ্টি! আকাশ কালো করে ঝম ঝম বৃষ্টি! ঘুম লাগা চোখে তাকিয়ে দেখি রাস্তায় টাখনু পানি, যার মানে হচ্ছে চৌরাস্তায় যেতে হলে আমাকে হাফ-লেগ পানি মাড়াতেই হবে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে কেমন করে বেরোই। 

এদিকে মেয়েটাও উঠে গেছে! ওর সাথে কিছুক্ষণ বৃষ্টি দেখে কখন যেন আবার কাত শুয়ে পড়েছি!

যখন উঠেছি পরে দেখি বৃষ্টি এক্টূ থেকেছে কিন্তু বেজে গেছে সাড়ে নয়! মানে আমাদের মর্নিং সেশন মিস হয়ে গেল! আমাদের ইউনিটের প্রেজেন্টেশন ছিল আজ।

বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে রাস্তায় নেমে পাচ্ছিনা কোন রিক্সা। ওরাও ছুটি নিয়েছে আজ! অন্যরাস্তা ধরে চৌরাস্তায় এসেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা! কোন বাস নাই যাবার মত, কিন্তু এক সমুদ্র মানুষ! বুঝলাম একটু বেশী ঘুমিয়ে ফেলেছি।

ভাবলাম একটা উবার মটো বা পাঠাও মটো নেই। পরে ভেবে দেখলাম এই কাদা-পানির দিনে আমার গা-পা সবই যাবে। তার উপর আবার যেকোন সময় বৃষ্টি হতে পারে! আর নাও পাওয়া যেতে পারে এই পিক টাইমে। 

রিক্সা খোঁজা শুরু করলাম। সেখানেও বিপত্তি। কেউ ডিএমসি যাবেনা! 

বলতে বলতে এক রিক্সা পেলাম, উনি ১০০ এর এক পয়সা কমে যাবেন না। তাই সই... উঠে বসলাম।

সায়েদাবাদ গিয়েই দেখি জ্যাম। রিক্সা বামে ঘুরে গেল! অনেক রাস্তা ঘুরে আবার সেই দয়াগঞ্জ মোড়ে। ভাবলাম এবার বোধহয় টুকাটুলির দিকে যাবে, কিন্তু রিক্সাওয়ালা বলে ঐদিকে জ্যাম। সে সোজা ধোলাইখালের দিকে। ধোলাইখালের ইংলিশ রোডও যখন ক্রস করে গেল তখন বুঝলাম গুলিস্তান এভয়েড করছে, পরে ঢুকল এক গলিতে নাজিরাবাজার! কিছুদুর যাবার পর সে হঠাত করে ইউ টার্ন নিচ্ছে, আমি কিছু বলার আগেই দেখি দুরে রিক্সার জ্যাম। সে এইবার ঘুরে যে কোন রাস্তায় গেল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, বোঝার সময় ছিলনা, কোথাও হাটু সমান পানি, কোথাও কোমর সমান। একবার রিক্সায় পানিই উঠে গেল, সে তবু রিক্সা টেনে চলছে আর আমি গ্যাট হয়ে বসেই আছি। পুরান ঢাকার রাস্তার যে এত "কোথাও উচু - কোথাও নীচু - বন্ধুর" অবস্থা সেটা পানি না জমলে বুঝতেই পারতাম না! মধ্যবয়সী এক লোক আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ডিএমসির দরজায়, সে তার নিজের অভিজ্ঞতায় নতুন রাস্তা ঠিকই বের করছে কিন্তু রাস্তাতো নিজেই ঠিক নেই! অবশেষে পুরান ঢাকার ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় এসে তার মুখে হতাশার শব্দ শোনা গেলঃ কেন যে এসেছিল এইদিকে! কোন ভুতে যে তাকে ধরছিল! ততক্ষণে ০১ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আর আমাকে রাউন্ডে এসে ম্যাডামও খুজে ফেলেছে! 

অবশেষে চানখারপুল দিয়ে রিক্সা বের হল এবং রাস্তার মোড়ের পানি আর সিগ্ন্যাল পার হয়ে  বার্ন ইউনিটের গেইট এ রিক্সা পৌছুল। আমি তাকে আরো কুড়ি টাকা বকশিশ দিয়ে বল্লামঃ চাচা! বাড়ি কই?

বরিশাল! 

থ্যাং ইউ! অনেক কষ্ট করছেন!

৩১.০৫.২০১৮