Saturday, June 8, 2024

"লেফট বিহাইন্ড সিন্ড্রোম"

 খুব মজার একটা জার্নাল পড়লাম সেদিন (আসলে খুঁজছিলাম অন্যকিছু ঢুকে গেছি এই মাঝে; ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া এবং শোনার অভ্যাস অনেকদিনের!)

মজার বলছি এই কারনে যে আমরা কোন জার্নাল বা সায়েন্টিফিক পেপাপ লেখার চিন্তা করতেই ভাবি, "কি নিয়ে লিখি"? "শক্তপোক্ত" বিষয় পাইনা! তাক লাগানো কিছুই পাইনা! অথচ এই জার্নাল একেবারেই সাধারণভাবে লেখা, বিষয় "সার্জারি করতে গিয়ে আমাদের ইন্সট্রুমেন্ট এর লেফট বিহাইন্ড"! এখানে অবশ্য অথর একজন প্লাস্টিক সার্জন বলে প্লাস্টিক সার্জারিকে ফোকাস করা হয়েছে।

জার্নালের শুরুটা এমন সিডনির কোন এক পুরাতন হাসপাতাল রিনোভেট করার সময় উঁচু কাঠের সিলিং এ খুঁজে পাওয়া গেল একটা "স্কালপেল" ( নাম bistoury; এই জিনিস এখানকার স্কালপেলের একেবারে আদি ফরমেট!)।

Scalpel কোত্থেকে আসলো!?

এই প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে হাজির করানো হল প্রবীণ এক নার্সকে, যিনি চাকুরী শেষ করে তখনো নার্স কোয়ার্টারে থাকেন। তার সূত্র ধরেই আবিষ্কার হল "একজন "বদরাগী" সার্জন ১৯২০ এর কোন একদিন সার্জারি করতে গিয়ে রাগে তার স্কালপেল ছুড়ে দিয়েছিলেন দিগ্বিদিক এবং ম্যাজিকের মত সেটা ভ্যানিশ! (এখনকার সার্জনরা কিন্তু এই ট্যাগ থেকে সরে আসছেন! তারা "বদরাগী" থেকে এখন "কুল" হচ্ছেন! তবে এই আলোচনা অন্য কোনদিন!)

"ইন্স্ট্রুমেন্ট কাউন্ট" করার ব্যাপারটা যে দরকারি ছিল সেটার আলোচনা এখান থেকেই শুরু! (এখানে অবশ্যই একটা ব্যাপার লক্ষণীয় ওরা ডকুমেন্টেশনকে কতটা গুরুত্ব দেয়! আর এত "আজাইরা" সময়ই বা পায় কোথায়!?)

"লেফট বিহাইন্ড" বা পেছনে ফেলা আসা! আমরা কতকিছুই না পেছনে ফেলে আসি, পেছনে "ফেলে আসা স্মৃতি", "ফেলা আসা শৈশব" কত গান কবিতা আর আবেগের গল্প। কিন্তু সার্জন হিসেবে "ফেলে আসা" ব্যাপারটা মোটেই কোমল আবেগের ব্যাপার না! একজন সার্জনের জন্যে, পুরো টিমের জন্যে "বি-ভী-ষি-কা"! বিভীষিকা শব্দটা আসলে নাইটমেয়ারের সঠিক বাংলা হল কিনা জানিনা; তবে যদি কোন সার্জন বা কাছের কেউ এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন তবে তিনি বুঝবেন শব্দটার জোর কতখানি!

সার্জন "পিছনে ফেলে" আসেন নন আবজরর্বেবল সুতা/ wire, mesh, ইমপ্ল্যান্ট, আর্টিফিসিয়াল গ্রাফট, বিভিন্ন ধরনের ক্লিপ এইসব। রুটিন অপারেটিভ প্রসিডিওরে প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে আমরা রেখে আসি "প্রচুর পরিমাণে" ভাস্কুলার ক্লিপ, (অবশ্যই বেশ ছোট; রেড এন্ড খুব অল্প পরিমানে ব্লু; তবে রেডিও-ওপেক এবং ভবিষ্যতে MRI করতে ঝামেলা করেনা), আর রেখে আসি সিলিকন (ব্রেস্ট ইমপ্লাণ্ট একটা বড় অংশ হলেও অন্যান্য চিন, নাসাল ইমপ্ল্যান্টও এই কাতারে পড়ে), এছাড়া ইমপ্ল্যান্ট হিসেবে বিভিন্ন মিনি প্লেট স্ক্রু থাকে (অরবিট, চিন, ফিঙ্গার ইত্যাদি), Mesh (Prolene or Vipro), কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রসথেসিস হিসেবে PEEK, Bone cement এগুলো। এমন নানাবিধ foreign material পেছনে ফেলে আসতে হয়, কখনো সাময়িক কখনো স্থায়ীভাবে।

এগুলো "ঠিকঠাক রেখে আসতে পারলে" তো আসলে আমরা খুব খুশীই থাকি। বিপত্তি বাধে হচ্ছে যা রেখে আসতে চাইনা তেমন কিছু রয়ে গেলে। যেহেতু বড় ক্যাভিটি হিসেবে অ্যাবডোমেন আমরা অবডোমিনাল রিকন্সট্রাকশন না হলে খুলি না তাই সঙ্গত কারণেই জেনারেল সার্জারির চাইতে আমাদের ডিসিপ্লিনে এই ক্যাভিটিতে রেখে আসার ঘটনা কম ঘটে!

"কম" বলছি একটু "সহজাত যুক্তিপূর্ন ভাবনা" থেকে; যদিও আসলে সায়েন্টিফিক কথা বলতে গেলে এইসব কম বেশি টাইপের কথা খুবই দুর্বল! সবল হচ্ছে সরাসরি ডাটা, এভিডেন্স! ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশে তো কোন সার্জারিরই এমন "লেফট বিহাইন্ড" ডাটা নাই তবে সারা পৃথিবীতে আলাদা করে প্লাস্টিক সার্জারির কোন ডাটাও নাই! অন্তত আমি খুঁজে পাইনি।

তবে অভারঅল সার্জারির যে ডাটা আছে তা থেকে দেখা যায় খোদ "কান্ট্রি অফ এক্সিলেন্স" আমেরিকাতেই প্রতি ১৫০০ সার্জারির একটাতে এমন রেখে আসার ঘটনা ঘটেছে! যেখানে একেবারে সাম্প্রতিক ডাটা অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় সংখ্যাটা লাখে ৭.৬ জন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা রেখে আসেন গজ; এই সংখ্যাটা শতকরা ৫০ ভাগের আশেপাশে! এছাড়া মপ, নিডল, ইন্সট্রুমেন্ট, এমন অনেক কিছুই এই তালিকায় আছে! আমাদের প্লাস্টিক সার্জারি করতে গিয়ে আমি নিজের অভিজ্ঞতা: এবডোমেনে মপ, mesh ইন্টেস্টেইনএর ভেতর (ইন্টেস্টেইন পার্শিয়ালি ফাংশনাল!), রাইনোপ্লাষ্টি রোগীর নাকের ভেতর আস্ত স্যালাইন ব্যাগের টুকরা, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা রোগীর হাঁটুর ভাঁজে ত্রিশ বছরের পুরোনো ইটের টুকরো, কত কি! (এবং অবশ্যই কোন ক্ষেত্রেই "কে করেছে" সেটার পেছনে ছুটিনি বা "সোরগোল জমাইনি"! রোগীকে রিয়েক্ট করতে দেওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা!)

এসবের মাঝে যাদের কাজগুলোই সুক্ষ্ণ যেমন চক্ষু সার্জারি বা আমাদের মাইক্রোসার্জারি তাদের ছোট্ট ইন্সট্রুমেন্ট হারানোর পর খুঁজে না পাওয়ার ব্যাপার তো আছেই। অনেকসময় এইসব কেইসে "লস্ট" ঘোষণা দিয়ে বসতে হয়! কয়েকদিন আগে পায়ের সার্জারিতে এক ভাস্কুলার ক্ল্যাম্প খুঁজতে আমাদের পুরো ওটি কমপ্লেক্স-এর স্পরাইল স্ক্যানিং করিয়ে ফেলার অবস্থা!

এগুলো বন্ধ করার উপায় কি?

- আসলে "বন্ধ" করার উপায় নাই! ব্যাপারটা অদ্ভুত শোনালেও সত্যি তাই। "বন্ধ" মানে হল "স্টপ"; ফুল স্টপ - মানে "আগামীকাল থেকে যত অপারেশন হবে সারা দুনিয়ায় তাতে কোথাও কেউ গজ, মপ, ইন্সট্রুমেন্ট রেখে আসবে না" এমন বাস্তবতা সম্ভব নয়। এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নাই সে যতই যাই কিছু করা হোক! "হিউম্যান এরর" হবেই!

তার মানে যেটা করতে হবে এটাকে সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে!

আচ্ছা তার আগে চিন্তা করা যাক এগুলো কেন হয়!

এগুলো কেন হয়?

গবেষণা করে যেসব কারণ পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: - সার্জনের অন্যমনস্কতা/ তাড়াহুড়া করা: দুটো বা ততোধিক সার্জিক্যাল টিম কাজ করলে ইন্সট্রুমেন্টের দায়বদ্ধতার জায়গাটা কমে যায়। এই দল ভাবে ও গুণে নেবে, আরেকদল ভাবে আগের ইন্সট্রুমেন্ট সব সরিয়ে ফেলা ঝামেলা।

- অপারেশনের আগে এবং পরে ঠিকঠাক মতো "সার্জিক্যাল টুলস" না গোনা।

- এবং "ব্যাড সার্জিক্যাল প্রাক্টিস"! (গুড সার্জিক্যাল প্রাক্টিস কি সেটাই অবশ্য পরে বলা হয়েছে!)


তাহলে প্রতিরোধের উপায় কি? (কমিয়ে আনার উপায় কি বললে আসলে বেশি ভালো হয়!)

অপারেশন রুমে কিছু প্র্যাকটিস করা যেতে পারে। যেমন:

- আধুনিক সার্জিক্যাল মেথড ব্যবহার: রেডিওঅপেক গজ আবিষ্কার হয় ১৯২৯ সালে এবং গজের মধ্যে রেডিওঅপেক থ্রেড দেওয়ার চল আসতে লেগে যায় ১৯৪৪!

- দুই বা ততোধিক টিম কাজ করলে এক টিমের কাজ শেষ হলে অন্য টিম সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট গুছিয়ে যাবে গুনে যাবে; তাতে যতই দেরী বা অতিরিক্ত ইফোর্ট লাগুক।

- যেসব ড্রেইন টিউব বা টুলস হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে এসব ক্ষেত্রে রেডিওঅপেক ট্যাগ ব্যবহার করা।

- সার্জারি শুরুর আগে ও শেষ হবার পরে ফাইনাল ইন্সট্রুমেন্ট, গজ, মপ কাউন্ট করা।

- কোন কোন ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে সার্জারি করার পরপরই সার্জারি করা অংশের এক্সরে করে ফেলা।

- সার্জিক্যাল টিমের সবাইকে দায়িত্ব পূর্ণ আচরণ করা: এটি খুবই দরকারি! ১৯৪৯ সালে আমেরিকাতে একটা ইন্টারেস্টিং রায় আছে যেখানে "ক্যাপ্টেন অফ দা শীপ" হিসেবে সার্জনকেই সব দায়ভার দিয়ে দেওয়া হয়েছিল (সম্ভবত "যত দোষ সার্জন ঘোষ" এই ধারণার সূত্রপাত এই ঐতিহাসিক রায়!) তবে আধুনিক সার্জারি সেই কনসেপ্ট থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখানে প্রত্যেকটা টিম মেম্বারের আলাদা দায়িত্ব এবং কর্তব্য আছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালে "অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অফ পেরি-অপারেটিভ নার্সিং" সারেকুলেটিং নার্সদের ও স্ক্রাব নার্সদের একটি নির্দেশনা দিয়েছে যার মূল বক্তব্যে দায়ভার অনেকটাই নার্সদের দিকে! সেখানে জোর দিয়ে বলা আছে ন্যূনতম দুইবার গুনতে হবে এবং অপারেশনের যত ওয়েস্ট বা আবর্জনা হবে এটা অপারেশন রুমেই রাখতে হবে! ফট করে ফেলে দেওয়া যাবে না!

- সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ ও কমিউনিকেশন স্কিল: পারস্পরিক শ্রদ্ধার যেমন দরকার আছে তেমনি ব্যাপারটা যেন এমন থাকে যে খুব বড় সার্জনকেও নার্স বলতে পারে "স্যার আমার ইন্সট্রুমেন্ট আবার গুনতে হবে"! " You have to stop the procedure and I will make sure that everything is counted right"! (এটা বলার মত স্মার্টনেস আমাদের "দুই একটা বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া" প্রায় কোন নার্সেরই নাই)। ওটি নার্সদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হিসেবে বলা হয়েছে, যেটা আমরা আসলে অতটা গুরুত্ব দেই না। আমাদের নার্সরা অত দক্ষ বা স্মার্ট থাকেনা সুতরাং আমাদের ক্ষেত্রে যিনি এসিস্ট থাকবেন তার দায়িত্ব অনেক বেশি বেড়ে যায়!

- মাইনর প্রসিডিওর বলে কোন প্রসিডিউরকে ছোট হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ছোট কেইসগুলো করতে গিয়েই সমস্যা বেশি হয়!

- কিছু টুলস যেমন গজ বা মপগুলোকে মুড়িয়ে তৈরি করা যেন কোনো ফাইবার বের হয় না আসে। (এই ব্যাপারটা একেবারে ওটিতে কাজ করা সার্জন ধরতে পারবেন) সাধারণত কিছু প্রাইভেট হসপিটালে এত সুন্দর বানানো গজ/ মপ পাওয়া যায়।

- ছোট করে মানতে চাইলে WHO এর বা সোসাইটি অনুযায়ী নিজেদের মত মডিফাই করে (ঠিকঠাক মডিফাই করতে পারলে এইটা আরও বেশি কার্যকর) "সার্জিক্যাল সেফটি চেকলিস্ট" ফলো করা: আলদা একটি গবেষণা অনুযায়ী এটা করলেই মোটামুটি ৫০% ক্ষেত্রে এইসব ঘটনা এড়ানো যায়!

এসব অনেক কথাই বলা হল, এগুলো মানলে ঘটনা অবশ্যই কমানো যায়। তবে শেষ কথা হচ্ছে একটা টিম হিসেবে কাজ করা এবং "তাড়াহুড়া" না করা, "সময়ের মূল্য দিয়ে" "সময় নিয়ে" স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করা।

শেষ করি জার্নালের শেষ লাইন দিয়ে: "The price of freedom is eternal vigilance"!


(কেউ যদি জার্নাল পড়তে চান লিংক:https://ajops.com/article/115366-the-left-behind-syndrome-surgical-equipment-errors-in-plastic-surgery?fbclid=IwZXh0bgNhZW0CMTEAAR0yFBO4Rov6XRklrZBz1Ia5goQc7SihNeeR_U80HkvJvqVryIyI4Fa9sR8_aem_AVL7mCR0YosaebZp9eejHPOgrl_QCmpYhJZHteBaw6qjqvmfmiod2qmqmozEVf9qZU5YYF5DBcRlwGGtSzHhpHwE )

০৭/০৬/২০২৪

Friday, October 13, 2023

শাহাবুদ্দীনের আঁকা


আমি চিত্রশিল্পীদের আঁকা "ভালো বুঝিনা"!

কেন লোকজন ভ্যান গগাকে নিয়ে এত "মাতে"; কেন দালির "অদ্ভুত" ছবি এত জনপ্রিয়!

অবশ্য এইগুলো যে কিছুটা "আরোপিত" সেইটা তো ঠিকই; "সময়" একটা জিনিসকে ভালো বলছে, বাহবা দিচ্ছে; তারমানে ব্যাপারটা "সেই"!

যদিও আমার আসলে যেইটা দেখে বুঝি সেই ছবি ভালো লাগে; ভিঞ্চির ছবির ডিটেইল আর ওর পেছনের নকশা, বিজ্ঞান এইগুলা "সহজ বোধে" আসে আর কি!

সেদিন সুযোগ পেয়ে ভাবলাম কন্যাকে নিয়ে আমাদের অধুনা সময়ের সবচে আলোচিত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনের কাজ দেখে আসি।

আমি ইতং বিতিং বুঝানোর কারণে মেয়ের মনে হয়েছে খুব মজার কিছু দেখতে যাচ্ছে! যদিও এইসব ছবি ঠিক শিশুদের ছবিও না; স্বাভাবিকভাবেই সে বলেছে "উইয়ার্ড", "বোরিং"; "আঁকা ভালো হয়নাই"! 🤣 আমি এটাই খুশি!


তবে আমার একটা নিরীক্ষণ হচ্ছে শিল্পী এস এম সুলতানের মত এই শিল্পীরও পেশীবহুল মানুষে উদ্যম আর শক্তি খোঁজার প্রয়াস আছে। সুলতানের যেমন নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পেশী শক্তির অধিকারী তেমনি শাহাবুদ্দিনের ছবিতে সবাই পেশী কথা বলছে!


অথচ শিল্পী দুজনই নিজেরা ছিলেন হার জিরজিরে দেহের অধিকারী!!

এইটা "প্রকৃতির খেল" নাকি নিজেরা পেশিহীন হওয়ায় শিল্পীর "মনের খেদ- এর প্রকাশ"; নাকি নেহায়েত "শিল্লের তাড়নায়" সেটা আমি জানিনা!

ছবির সংখ্যা কম না তবে আরো আছে হয়ত কোথাও কোথায় ছড়িয়ে; প্রায় সবই বিভিন্ন সংগ্রহ থেকে ধার করে আনা।

শুনেছিলাম সুলতানের শত শত ছবি "রাখার জায়গায় অভাবে" বৃষ্টি রোদে নষ্ট হয়েছে! আমাদের ছবি দেখার পুরোটা সময়ে আমরা বাপ বেটি দুজনেই ছিলাম, বাকি দর্শনার্থী কেউ ছিলনা! এ থেকেই বোঝা যায় আমাদের শিল্প নিয়ে "বোধ"!


১১/১০/২০২৩

Saturday, March 19, 2022

আমাদের মিল্কি ওয়ে

বছর পাঁচেক আগের ছবি।

যখন আমি আমার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে কাজ করি।
যখন ইলেকট্রিসিটি চলে যায় আমি হুড়মুড় করে ছাদে ওঠার চেষ্টা করি, আশেপাশে যতক্ষণ আলো না জ্বলে আঁধার থাকে সেই সময়টা কাজে লাগানোর চেষ্টা; "লাইট পলিউশান" এড়ানোর চেষ্টা আর কি!

সবসময় আকাশ পরিষ্কার পাই না, বেশিরভাগ সময় মেঘ থাকে বা চাঁদের আলো থাকে! কোয়ার্টারের ছাদে ওঠাও একটা হ্যাপা, সেখানে রাজ্যের আগাছা; ঠিকঠাক ইনফিনিটি ফোকাস করতে করতেই মাঝে মাঝে সামনের কোয়ার্টারে তীব্র আলো জ্বলে ওঠে, লং এক্সপোজারে ছবি নষ্ট হয়; আমি ট্রাইপড গুটিয়ে চলে আসি! সব সুবিধামত পেয়ে গেলেও কয়েক মিনিটের ছবিতে নয়েজ কমে না; শুধুমাত্র ম্যানুয়াল শাটার চাপব না বলে ইতোং বিতোং করে ফোনকে শাটার বাটন বানাই; তাও মনের মত ছবি পাইনা; আমার চাওয়া অনেক কিন্তু ক্যামেরা হচ্ছে ক্যানন ১২০০ (যারা ছবি তোলেন তারা জানেন এইটা একদম এন্ট্রি কোয়ালিটি ক্যামেরা)!

তাও আমি দমে যাই না, 'মিল্কি ওয়ে" - আমাদের ছায়াপথের ছবি তুলব! লক্ষ কোটি নক্ষত্রের আমাদের ছায়াপথ! যে আলো ছবিতে ধরেছি তার অনেক নক্ষত্র আদতে এখন নাই; কোন কোনটা আরও হাজার বছর আগেই আলো দিয়ে মরে গেছে! সেই শেষ আলোটা ক্যামেরায় ধরব! কী উত্তেজনা! ছাদের ঘুট ঘুট শুনে প্রথমদিকে Monimul Habib ভাই চলে আসতেন, পরে উনিও অভ্যস্ত হয়ে গেলেন; ছাদের একটা চাবি আমার কাছে থাকত।

এইসব ছেলেমানুষী করতে গিয়ে যা কিছু ছবি তুলেছিলাম সেগুলো এখন আমাকে অসম্ভব আনন্দ দেয়!

যেদিন মস্ত চাঁদ ওঠে, গরমে হালকা বাতাসে আমার ছোট্ট মেয়েকে ঘাড়ে নিয়ে চাঁদ দেখাই, চাঁদের গান শোনাই, কি সব আবোল তাবোল ওকে শোনাচ্ছি শুনে লোকে হাসে, ভাবে স্যারের মাথায় হালকা সিট আছে!

কী পরাবাস্তব সময়!

সেই এক সময়ের সাক্ষী আমার কোয়ার্টারের মাথার ওপর আমাদের ছায়াপথ!

#milkyway
#canon1200d

Saturday, December 11, 2021

মলিন মানে কি!?

প্রতিদিন আমার মেয়েটা শুধু খেলা আর খেলা নিয়ে থাকে!
এই বন্দী করোনা কালে শিশুদের অনেক অভ্যেস তৈরি হবার সুযোগই নাই! সবাই বাক্সে বন্দী!

হাসপাতাল থেকে ফিরে দেখি দৌড়াদৌড়ি করে ঘেমে, কোথায় কোথায় কালি লাগিয়ে, পানি না খেয়ে একটু ডিহাইড্রেড। বললাম
- মা! তোমাকে এমন মলিন দেখাচ্ছে কেন?
- মলিন! মানে?
- মলিন মানে বুঝতে পারলে না!?
- উহু
- আচ্ছা দাড়াও তোমাকে একটা গান শোনাই!
- গান?
- হুম! এই গানটা হচ্ছে নজরুল সঙ্গীত! আমাদের জাতীয় কবি লিখেছেন! যে যে গান লেখে আর সুর দেয় সেই গানটা তার হয়ে যায়। এই মনে কর রবীন্দ্রনাথ যেসব গান লিখে সুর দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে রবীন্দ্র সংগীত। তুমি যদি কোন লিখে, সুর দিয়ে কোন গান বানাও সেই গান হবে সাম্মি সঙ্গীত!
- (😁)
- তো গানটা শোন, .... মলিন হয়েছে ঘুমে চোখেরও কাজল... নহে নহে প্রিয় এ নয় আঁখি জল!
- কি বুঝলে!?
- 🙄
- আচ্ছা শোন নহে মানে না, নহে নহে মানে দুইবার না বলেছে। প্রিয় মানে পছন্দের কেউ। আর আঁখি মানে... চোখ! বাংলায় কিছু কিছু জিনিসের অনেক নাম আছে যেমন, আখি মানে চোখ, আবার চোখ মানে তো চোখ; চোখের আরও একটা নাম আছে, নেত্র! এই নামে আবার একটা জায়গায় নাম আছে; নেত্রকোনা! মানে চোখের কোনা! মজা না!?
- 😁 চোখের কোনা!
- আবার মনে কর এই যে তুমি মাকে বল মাম; আবার মা! দুটো মানেই তো মা তাইনা? এমন আরও অনেক শব্দ আছে যার মানেও মা! এবার বল জল মানে কি?
- কি?
- জল মানে হচ্ছে পানি! এটাও পানির আরেকটা নাম! যেমন পানির আরেকটা নাম বারি!
- এতগুলো নাম কেন?
- আসলে যারা কবিতা লেখে, এই যে আমাদের জাতীয় কবির মত এরা তো অনেক জ্ঞানী! অনেক জানে! ওরা একটা কিছুর অনেক নাম জানে আর সেগুলো দিয়ে সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখে! বুঝলে?
- হুম
- তো ... মলিন হয়েছে ঘুম চোখের কাজল... শুনে তোমার কি মনে হল?
- 🙄
- আচ্ছা মনে কর, কেউ চোখে কাজল দিয়েছে, তোমার মত ছোট বাবু! চোখে কাজল চকচক করছে! তারপর সে ঘুমিয়ে গেল! তারপর ঘুম থেকে উঠলে সেই কাজল কি আগের মত থাকবে? বিছানা বালিশ লেগে চোখে কেমন মুছে যাবে না? আর যদি বাবুটা কান্নাকাটি করে তাহলে তো কাজল মুছে ওর গালেই লেগে যাবে! ভাব একবার ব্যাপারটা!
- এইবার বুজলে মলিন মানে কি? (সামান্য শব্দ মলিন বোঝানোর জন্যে একটু বেশীই হয়ে গেল!)
- হুম! (মলিন শব্দটা এত্ত কঠিন!!)
- আচ্ছা জানো এই গানটা কবি নজরুল কেন লিখেছে?
- কেন? (উৎসাহী!)
- কারণ কবিরা তো অনেক জ্ঞানী হয়! কবি নজরুল জানতো একদিন পৃথিবীতে একটা ছোট বাবু আসবে আর সে একদিন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করবে মলিন মানে কি; তাই মলিন মানে কি সেই ছোট্ট বাবুকে বোঝানোর জন্য কবি এই গান লিখেছেন!
- সত্যি! আমাদের জাতীয় কবি আমার জন্যে এই গান লিখেছে?
- অবশ্যই! তোমার দাদাভাই তো জাতীয় কবি না, দাদাভাই তোমার জন্যে একটা কবিতা লিখেছে না?
- হুম লিখেছে!
- তো! দাদাভাই একটা কবিতা লিখলে জাতীয় কবি তোমার জন্যে একটা গান লিখবে না!?
- সে আগে থেকেই জানতো আমার কথা!?
- অবশ্যই! বললাম না কবিরা খুব জ্ঞানী হয়! তারা অনেক পড়ে আর ভাবে! পড়ে বলে তারা অনেক জানে আর ভাবে বলে তারা অনেক লিখতে পারে! দেখনা দাদাভাই অনেক ভেবে ভেবে একটা কবিতা লেখে!
- মাম! সত্যিই কি জাতীয় কবি আমার জন্যে এটা লিখেছে!
- তুমি মামকে জিজ্ঞেস করছ কেন!? বাবা অবশ্যই তোমার সাথে মিথ্যে বলছে না!
- এবার বুঝলে মলিন মানে কি?
- ❤️

২৭/০৪/২০২১

Tuesday, September 29, 2020

পাকিস্তান না!

- মা! আমাদের কোথাও বেড়াতে যাওয়া দরকার। কোথায় যাওয়া যায় বলতো?

- আমরা পাহাড়ে যেতে পারি!

- পাহাড়ে!?

- হুম... আর চাইলে মরুভূমিতেও যেতে পারি!

- মরুভূমি! সেটা তো অনেক দূর! আমাদের দেশে তো মরুভূমি নাই!

- তাহলে কোথায় আছে? কোন দেশে আছে?

- এই মনে কর, আফ্রিকা!

- তাহলে আফ্রিকা যাব।

- আফ্রিকা তো অনেক দূর!

- তাহলে কাছে কোন দেশে আছে?

- এই মনে কর পাকিস্তান!

- না না বাবা! পাকিস্তান যাবনা! পাকিস্তান না!

- কেন বাবা!? (তড়িৎ পাকিস্তান না যাবার সিদ্ধান্ত নেবার কারণ বুঝলাম না!)

- জাননা! পাকিস্তানের মানুষ যে বাংলাদেশী মানুষদের মেরে ফেলে!


২৯/০৯/২০২০

Monday, September 28, 2020

what মানে কি?

আমি সাম্মিকে একটু পড়াশোনা শিখাচ্ছিলাম! বিষয় ইংরেজি!

বিভিন্ন শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করতে করতে বললামঃ
- বলতো মা!৷ What মানে কি?
- What মানে "চমকে যাওয়া"! 
- 😅😅😆


২৬/০৯/২০২০ 

Monday, September 7, 2020

রাস্তায় কুকুর থাকবে কি থাকবে না!?

এখন এমন ঘোষণা হয়েছে যে সিটি কর্পোরেশন কুকুর নিধন করবে! শহুরে কুকুর আর থাকবে না! অনেকেই বলেছেন কুকুর থাকবে কি থাকবে না তাতে তাদের নাগরিক জীবনের কিছু এদিক সেদিক হবে না!
তবে আমার ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন!

রাস্তায় কুকুর না থাকলে আমার যে ভয়ানক সমস্যাটা হবে সেইটা হচ্ছে রাস্তায় বের হলেই আমি আর আমার মেয়ে কুকুর খুঁজি! সেই "দগ" বয়স থেকে সে এখন এই "কুকুর" পর্যন্ত আমি মেয়েকে নিয়ে কুকুর দেখি। তারা একা কেন থাকে, ওদের মাম কোথায়, রাগ করে ওরা চিৎকার করছে, গাড়িতে থাকলে ওরা আমাদের থেকে "পিছিয়ে যায়" এগুলোই আমাদের বিষয়! 

এখন অবস্থা এমন আমি রাস্তায় একা হাঁটলেও মেয়ের সমান আগ্রহ নিয়ে কুকুর দেখি। 

তাই আমার জন্য বিরাট সমস্যা!

০৭/০৯/২০২০