Friday, February 14, 2020

আমার বসন্ত ১৪২৬

চারিদিকে বসন্তের আগমনী ধ্বনি! 
ঋতুরাজ বসন্ত!
আহা! আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে! কত বাঁশি বাজে! কত পাখি গায়!
বসন্ত এসে গেছে...

গুটি বসন্ত নাকি জল বসন্ত এসেছে সে প্রশ্ন করবেন না মশাই বসন্ত তো এসে গেছে!

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, একটু "মুখবই"(facebook) খোলা না রাখলে,  দৈনিক প্রত্রিকার বাংলা তারিখ না দেখলে বা "তোমরা বলে না দিলে" বুঝতেই পারতাম না যে "বসন্ত" এসেছে! অনেকে আবার বাংলা ক্যালেন্ডার আর দিন ক্ষণের ব্যবচ্ছেদ-এর ব্যাপারটা জানেন না;  ফলে আগের মতই "১৪ তারিখের আগের দিন" মানে গতকাল পালন করে বসে আছেন! 

আমার ছোট্ট মেয়ের কিছু পছন্দের গান আছে। তার ভেতর "ফাগুনের মোহনায়" আর "বসন্ত এসে গেছে" এগুলো আছে।  একদিন সাম্মি বাবাকে প্রশ্নই করে ফেলল: 
: বাবা! বসন্ত এসে গেছে; বসন্ত আসলে কি হয়?
(আমি মনে মনে খুশি! যাক একটা বেসিক প্রশ্ন হয়েছে! কিছুটা "natural rules & order" বুঝিয়ে দিই!)
বললাম: এই যে গানে বলেছে না! আহা আজি এ বসন্তে..  বসন্ত আসলে চারিদিকে অনেক রঙিন ফুল ফোটে!  অনেক পাখি সেই ফুল দেখে আনন্দে গান গায়! শীত পালাই পালাই করে আর সবার মনে খুব আনন্দ হয়!

কিন্তু আমি জানি এগুলো বলেও ওকে সত্যিকারের বসন্তের ব্যাপারটা বোঝানো যাচ্ছে না! 

যেমন ছোটবেলায় ক্লাস ওয়ানের সম্ভবত একটা বই ছিল; "আমার বই"; সেখানে সব ঋতুর নাম ছিল আর নামের পাশেই একটা "ক্যারেক্টারিস্টিক" ছবি। সেখানে গ্রীষ্মকালে ফেটে যাওয়া মাটি আর আম কাঁঠালের ছবি, বর্ষায় ঘন বরষা সাথে ব্যাঙের ডাক, শরতে সাদা কাশফুলের ওপরে পরিষ্কার নীল আকাশে সাদা সাদা শুভ্র মেঘ, শীতকালে খেজুর গাছে হাড়ি, হেমন্ত সম্ভবত পালতোলা নৌকার ছবি ছিল। আর বসন্তের ছবিতে গাছে গাছে পাখি, বনে বনে ফুল বোঝাতে একটা বনের মাঝে  কোন এক বালক মনের সুখে দাঁড়িয়ে আছে, চারদিকে ফুল ফুটেছে আর গাছের ডালে পাখি বসে আছে! 

আমি বললাম: তুমিতো চারিদিকে অনেক গাছ দেখতে পাচ্ছো না। অনেক গাছ থাকলে তুমি দেখতে পেতে চারিদিকে অনেক ফুল ফুটেছে! তখনই বুঝে ফেলতে বসন্ত এসে গেছে! আর অনেক পাখির ডাক শুনতে! 

ইট কংক্রিটের শহরে তার "দুইমাত্র" জানালাই যেখানে কয়েকমাস ধরে দেয়ালে এসে আটকে গেছে সেখানে ফুল সে দেখেনা এটা সত্যি কিন্তু "পাখির ডাকের" কথা উঠতেই সে বলে উঠলো:
: না আমিতো পাখির ডাক শুনেছি! এই যে সকালবেলা অনেক পাখি ডাকাডাকি করে! চড়ুই পাখি! তারপর কাক!...

পাখিদের সারিতে দ্বিতীয় নামটাই "কাক"!

এইট কংক্রিটের জঞ্জালে বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য পাখি প্রথম নামটাইতো কাক হবার কথা ছিল! তারা প্রকৃতির অন্য কোনো অনুষঙ্গ দেখুক না দেখুক আকাশ দখলে নেতা প্রচুর কাক আর রাস্তা দখলে নেয়া কুকুর; এদুটো প্রাণীকে তারা দেখবেই! এরাও "প্রকৃতির সন্তান", আমার এদের উপর কোন বিদ্বেষ নেই কিন্তু সেই "প্রকৃতি" কোথায়!? 

চারিদিকে বসন্তের যে পালন আর এখন ১৪ ফেব্রুয়ারির  সাথে বাসন্তী রঙ মিলে যাওয়ার কারণে, ঋতুরাজ বসন্তের ব্যাপারটার ঢাকা পড়ে যাবে হয়ত অন্য রঙে! আমাদের শিশুরা, কিশোর-কিশোরীরা বড় হয়ে উঠবে বসন্ত মানে "ভালোবাসার সময়" ভেবে! 

আমি আমার শিশুকে, আমাদের শিশুদের একটা সত্যিকারের বসন্ত দেখতে পারলাম না! এ আমার বড় আফসোস! এখন আমি আকাশ দেখতে পাইনা কিন্তু আমি আকাশ দেখেছি, আমি জানি "আমার এক মস্ত আকাশ আছে" কিন্তু আমার শিশু তো জনলোই না ওর আকাশ, ওর বসন্ত, ওর ফুল আর পাখিদের আমরা চুরি করে ফেলেছি! ওরা আর কোনদিন সেটা খুঁজে পাবেনা! ওরা জানবেই না ওদের কি হারিয়ে গেছে, খুঁজবে কেন!?

যাক এসব কথা। চারিদিকে কত রঙ, রঙ থেকে রঙ্গ! আমিই শুধু হাহাকার খুঁজি!

রবি বাবুকে স্মরণ করি:
সুখে ছিল যারা, সুখে থাক তারা, সুখেরই বসন্তে সুখী হোক ধরা। 

১৪/০২/২০২০